২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০২:৫৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর আওয়ামী লীগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর আওয়ামী লীগ

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও আদর্শিক বিচ্যুতির প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দিতে সাংঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার দিকে মনোযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দলের অন্তর্কোন্দল, মনোমালিন্য ও দূরত্ব ততই বাড়ছে। এমতাবস্থায় নির্বাচনের আগে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্প্রতি দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ বার্তা দেন তিনি।


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে প্রতিযোগিতা থাকবেই। জাতীয় নির্বাচনে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল ভুলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সবাই কাজ করবে। কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, আদর্শিক প্রশ্নে বিচ্যুতি ঘটালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।


জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সারা দেশে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, ফৌজদারি অপরাধ ও আদর্শিক বিচ্যুতির কারণে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থানেওয়া হয়েছে। সাময়িক ও স্থায়ী বহিষ্কার, দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো সংগঠন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে দলীয় নেতাকর্মীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।


সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সমবেদনা ও শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপর থাকতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গণহারে শোক প্রকাশে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের ছাত্রলীগে থাকার অধিকার নেই। কোন ফাঁক দিয়ে তারা ঢুকে গেছে আমাদের এই সৃজনশীল দলে! এদের চিহ্নিত করতে হবে।


ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ছাত্রলীগের অন্তত সাড়ে তিনশ নেতাকর্মী সাঈদীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপরতার অভিযোগে বহিষ্কার হয়েছেন। এ ছাড়া সহস্রাধিক নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা হয়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় আদর্শিক বিচ্যুতির অপরাধে খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া খুন, জালিয়াতি, মারামারিতে জড়িত থাকার অপরাধে ছাত্রলীগের কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।


ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ কালবেলাকে বলেন, তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকায় সহস্রাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে। আদর্শিক প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধেও যাচাই-বাছাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


জানা গেছে, সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানানো স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে পাবনা, গাজীপুরসহ কয়েকটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও বহিষ্কার করা হয়েছে। সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আট নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ ছাড়া এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্টের কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা পদত্যাগ করেন।


স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে আদর্শিক প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আসন্ন নির্বাচনে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যদি কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা সংগঠনের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সংগঠন তার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান থাকবে।


যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় খুলনার রূপসা উপজেলার দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে যুবলীগ। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—এমন নেতাকর্মীর তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।


সহযোগী সংগঠন ছাড়াও সাঈদীকাণ্ডে খুলনায় আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। বগুড়ায় সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫৫ বস্তা চালসহ গ্রেপ্তার সদর উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করায় নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিনকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে নানা অপরাধে জড়িত ও দলে বিশৃঙ্খলা করায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।


সাঈদীর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করায় কক্সবাজারসহ কৃষক লীগের অন্তত একডজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন জাতীয় কমিটির সদস্য মাহমুদুল হাসান সাতাব, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মাসুদ, মাতামুহুরী উপজেলার সভাপতি কামরুজ্জামান সোহেল।


কৃষক লীগের দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, কয়েকটি জেলায় নেতাকর্মীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য নেতাকর্মীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।


এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ সাভারে কিশোরীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহনাজ তাবাসসুম মিশুকে বহিষ্কার করা হয়েছে।


শেয়ার করুন