২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:০০:৪৮ অপরাহ্ন
দুই হত্যা মামলার তিন আসামি পেলেন বিএনপির শীর্ষ পদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৫
দুই হত্যা মামলার তিন আসামি পেলেন বিএনপির শীর্ষ পদ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া তিন জনই হত্যা মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে খোদ দলীয় কর্মী হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে।


গত ২৬ আগস্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মো. ফারুক কবিরাজকে। এ ছাড়া ইমাম হোসেন গাজীকে সাধারণ সম্পাদক ও আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৭ এপ্রিল এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় ওই দিন মো. সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪৫) নামের এক কর্মী নিহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ দিন পর মারা যান জসিম উদ্দিন ব্যাপারী (৩৮) নামে আরও একজন।


সাইজুদ্দিন দেওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বড় ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৬০ জনকে আসামি করে রায়পুর থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মো. ফারুক কবিরাজকে, যিনি সদ্য গঠিত কমিটিতে সভাপতির পদ পেয়েছেন। মামলাটিতে আসামির তালিকায় ৯ নম্বরে রয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বরের নাম।


অন্যদিকে জসিম উদ্দিন ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় রায়পুর থানায় মামলা করেন তার বাবা হজল করিম ব্যাপারী। মামলাটিতে ইমাম হোসেন গাজীকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে, যিনি নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।


দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নির্বাচনের মাধ্যমে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে এসে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ছালেহ আহাম্মদ তিনজনের পদ ঘোষণা করেন।


জানতে চাইলে ছালেহ আহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তবে ভোট গ্রহণের আগে নেতাকর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।


হত্যা মামলার আসামিরা শীর্ষ পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের একজন নেতার নির্দেশে খুনের মামলার আসামিদের দিয়ে কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। তবে আমি মনে করি, মামলার আসামিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখাটা দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টির কারণে সাধারণ মানুষ বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।’


জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘আমি খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তা ছাড়া খুনের ঘটনায় উভয় পক্ষ সমঝোতা হয়ে গেছে।’


সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন গাজী বলেন, ‘বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না।’ একই কথা বলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বর। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার রাজনৈতিক অবস্থান ধ্বংস করতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। খুনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’


জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জে এম নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটিতে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টা নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।’


হত্যা মামলা দুটি প্রসঙ্গে রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো এখনও তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হওয়া পর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘খুনের মামলা স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই।’


শেয়ার করুন