বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশীদারি তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঁচামাল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও বাংলাদেশ চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে।
৩১ জুলাই প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বৈশ্বিক বাজারের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বাজারের অংশীদারি অর্জন করেছিল। রপ্তানিকারকরা এ প্রবৃদ্ধির জন্য পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং চীন থেকে অর্ডার আনার চেষ্টায় সফল হয়েছে বলে মনে করছেন। তারা বলেছেন, সরকারের কাছ থেকে যদি প্রয়োজনীয় সহায়তা, যেমন নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ এবং কর ও শুল্ক সুবিধা পান তাহলে রপ্তানি আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গত বছরের রপ্তানি খুব ভালো হওয়ায় বাংলাদেশের বাজার শেয়ারে এ উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। তিনি আরও বলেন, উৎপাদনকারীরা উচ্চমূল্যের বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি এবং জাপান, ভারত ও কোরিয়ার মতো কিছু নতুন বাজারে প্রবেশের ফলে বাজার অংশীদারত্ব বেড়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশও কিছু অর্ডার পেয়েছে যেগুলো চীন ও ভিয়েতনাম থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) অনুসারে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ২ হাজার ৩৯৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে চীনের অংশীদারত্ব আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে কমেছে। ২০২১ সালে চীনের অংশীদারত্ব ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে গত বছর ৩১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে চীন থেকে রপ্তানি হয়েছিল ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক। ২০২২ সালে ভিয়েতনাম তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ২০২১ সালে দেশটির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২২ সালে ভিয়েতনামের চেয়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যেখানে ২০১৮ সালে উভয় দেশই একই পরিমাণ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। ২ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক অংশীদারত্ব নিয়ে চর্তুথ অবস্থানে রয়েছে তুর্কি। এর পরই রয়েছে ভারত। দেশটির বৈশ্বিক অংশীদারত্ব ৩ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক সামগ্রী রপ্তানি করেছে ভারত। ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ৫০টি বৃহত্তম পণ্য ব্যবসায়ী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৯ তম। যেখানে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছিল ৫৩তম।