২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:১৭:২৯ অপরাহ্ন
সরকারবিরোধী অপপ্রচার ঠেকাতে হ্যাকারদের পাশে চায় পুলিশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২৩
সরকারবিরোধী অপপ্রচার ঠেকাতে হ্যাকারদের পাশে চায় পুলিশ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী গুজব (ভিডিও ও কনটেন্ট) ঠেকাতে ক্ষতিকর—নয় এমন হ্যাকারদের সহায়তা নেওয়ার চিন্তা করছে পুলিশ। তাদের পরিকল্পনায় থাকা তিনটি উপায়ের মধ্যে এই বিষয়েই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্য দুটি উপায় হলো আপত্তিকর কনটেন্ট সরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আবেদন করা এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর হওয়া।


পুলিশের সূত্র বলেছে, সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে এমন পরিকল্পনা তুলে ধরেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরিকল্পনায় এথিক্যাল হ্যাকারদের সহায়তা নিতে চুক্তির কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিআইডির সাইবার গোয়েন্দারা কাজও শুরু করেছেন।


তবে অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, হ্যাকার ভাড়া করে গুজব প্রতিরোধ করা শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশের করাটা ঠিক নয়।কারণ, এই হ্যাকাররাই আবার দুর্বলতাকে পুঁজি করতে পারে। এর চেয়ে পুলিশ সদস্যদের এ বিষয়ে দক্ষ করে তোলা সবচেয়ে উত্তম।


সিআইডি বলেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী গুজব বাড়ছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী একটি মহল নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। বেশির ভাগ গুজবই ছড়ানো হচ্ছে বিদেশে বসে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিতে না পারায় অপপ্রচার বাড়ছে। এমন কনটেন্ট ও ভিডিওর বিষয়ে সম্প্রতি ফেসবুকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন।


সূত্র বলেছে, ২৩ আগস্ট সিআইডির সদর দপ্তরে এক মতবিনিময় সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সামনে গুজব ও সাইবার অপরাধ ঠেকানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে সিআইডি। প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, গুজবের ৬০ শতাংশই বিদেশে বসে ছড়ানো হয়।


আপত্তিকর এসব ভিডিও-কনটেন্টের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করেও নিয়মিত সাড়া পাওয়া যায় না। এ জন্য বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এথিক্যাল হ্যাকারদের সঙ্গে চুক্তি করা যেতে পারে। যাতে তাদের সহায়তায় নিজেদের ইচ্ছেমতো এমন কনটেন্ট ব্লক করা যায়।


সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাইবার স্পেসে গুজবসহ নানা অপরাধ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে ২৩ আগস্ট আলোচনা হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশে-বিদেশে সাইবার এবং ফরেনসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও গবেষণা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


কিছুদিন আগে মুহিত নামের এক আইডি থেকে ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে ছড়ানো সরকারবিরোধী একটি গুজব ভাইরাল হয়। তবে তাঁর অবস্থান জানতে পারেনি পুলিশ।


পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়, ধর্মীয় উসকানি, গুজব, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণাসহ বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট-ভিডিও দ্রুত সরাতে এবং ওই আইডি ব্লক করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তালিকা পাঠাচ্ছে র‍্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা। সরাসরি কনটেন্ট ব্লক করার সক্ষমতা না থাকায় বিটিআরসি সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্য সংস্থাগুলোতে পাঠাচ্ছে। তবে অধিকাংশ কনটেন্টে ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন’ লঙ্ঘিত না হওয়ার যুক্তিতে সেগুলো অপসারণ করে না সংস্থাগুলো। এমনকি এক-তৃতীয়াংশের কম অনুরোধে সাড়া পাওয়া যায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৪৪৯টি অ্যাকাউন্ট বা ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। অথচ তথ্য দিয়েছে মাত্র শতাধিক ব্যবহারকারীর।


তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউব আগে আমাদের অনুরোধে যে পরিমাণ সাড়া দিত, বর্তমানে তা অনেকাংশে বেড়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’


সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ব্লক করতে ধীরে ধীরে নিজস্ব যোগ্যতা বাড়াতে হবে।


ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও জঙ্গি দমন ইউনিটের সাইবার শাখা সূত্র বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের নিয়েও অসংখ্য গুজব ছড়ানো হয়েছে।


পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশকে চাপে ফেলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে এসব অপপ্রচার ও গুজবের আশ্রয় নিচ্ছে কেউ। পুলিশের উচিত দায়িত্ব থেকে পিছপা না হয়ে সত্য দিয়ে গুজবকে প্রতিরোধ করা।


মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, পেশাদার হ্যাকার ভাড়া না করে পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন ইউনিটগুলোকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সহায়তাকারী হ্যাকারদের কাছে ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। 


শেয়ার করুন