সহিংসতা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক এবং বিস্তৃত হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত গত ১২ মাসে অধিকাংশ দেশেই রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি)। তাদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ উচ্চ সহিংসতার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং সহিংসতাপ্রবণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২২।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত— এই ১২ মাসে ২৪০টি দেশ ও অঞ্চলের সংঘাত ও সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করে এই তালিকা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি।
এই তথ্যের ভিত্তিতে সহিংসতাপ্রবণ ৫০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে এসিএলইডি। সম্প্রতি প্রকাশিত এ তালিকায় শীর্ষে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি সহিংসতাপ্রবণ দেশের তকমা পেয়েছে মিয়ানমার। এরপরই রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, মেক্সিকো, ইউক্রেন ও নাইজেরিয়া। তালিকার শেষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এই তালিকায় স্থান পেয়েছে।
তালিকায় বাংলাদেশের আগে অর্থাৎ ২১ নম্বরে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। আর বাংলাদেশের পরে ২৩ নম্বরে রয়েছে কেনিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত রয়েছে ১৬ নম্বরে, আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৯।
২৪০ টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলের ডেটা সংগ্রহ করে এসিএলইডি দেখেছে, এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ ১৬৭টি দেশেই ১২ মাসে অন্তত একটি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজারটির বেশি। আর এতে প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার।
এসিএলইডি সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, বিশ্বজুড়ে গত এক বছরে সহিংসতা বেড়েছে ২৭ শতাংশ। বিশ্বে যে পরিমাণ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এর ৯৭ শতাংশই ঘটেছে তালিকায় থাকা ৫০টি দেশে।
চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতি বছর সহিংসতাপ্রবণ দেশের তালিকা করে এসিএলইডি। এই মানদণ্ডগুলো হলো— সহিংসতায় নিহতের ঘটনা, জনসাধারণের ঝুঁকি, সহিংসতার বিস্তার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংখ্যা।
এসিএলইডির প্রতিবেদনে সহিংসতাপ্রবণ দেশগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো— ‘চরম’, ‘উচ্চ’ ও ‘উত্তাল’ সহিংসতাপ্রবণ দেশ। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান উচ্চ সহিংসতাপ্রবণ গ্রুপে।
এ ছাড়া সহিংসতাপ্রবণ দেশগুলোর পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটিরও একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এসিএলইডি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। যেখানে ভারতের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দেশটির পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে ১৯টি দেশে সহিংসতাপ্রবণ এসিএলইডির সূচক র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হয়েছে। আর ১৯টি দেশে সংঘাতের মাত্রা আরও বেড়েছে। ১৪টি দেশ ধারাবাহিকভাবে ‘চরম’ বা ‘উচ্চ’ সংঘাত স্তরের বিভাগে রয়ে গেছে, এগুলোর র্যাঙ্কিংয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সামগ্রিকভাবে, সূচকের শীর্ষে থাকা ৫০টি দেশের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৩৯) দেশে ২০১৮ সালের তুলনায় সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থেকেছে বা ক্রমেই বেড়েছে।
দেখা গেছে, মধ্যম আয়ের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সংঘাত দ্রুত বাড়ছে। অর্থাৎ দারিদ্র্য সে অর্থে সংঘাত ডেকে আনছে না। তার মানে দেশের সম্পদ বৃদ্ধিই যে শান্তির নিশ্চয়তা দেয় না সেটিই প্রমাণিত হচ্ছে। এসিএলইডি সূচকের শীর্ষ ৫০টি সহিংসতাপ্রবণ দেশ কিন্তু জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে স্থান পেয়েছে। এই তুলনায় যেমন দেখা যায়, ‘চরম’ বা ‘উচ্চ’ স্তরের সংঘাতপূর্ণ অনেক দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের উচ্চ এবং টেকসই স্তরে স্থান পেয়েছে।
দেশ ও অঞ্চল ভেদে সংঘাত ও সহিংসতার ধরনও আলাদা। গৃহযুদ্ধ এবং বিদ্রোহ থেকে শুরু করে মাদক মাফিয়া গোষ্ঠীগুলোর প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক সহিংসতা— ইত্যাদি একেক দেশে সংঘাতের একেক রূপ।