২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৫৮:২৮ অপরাহ্ন
প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বেহিসাবি অনিয়ম-দুর্নীতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৩
প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বেহিসাবি অনিয়ম-দুর্নীতি

ব্যাংকের পরিবর্তে ঠিকাদারের অ্যাকাউন্টে তিনি চেক প্রদান করেছেন। কাজ না করার পরও অগ্রিম টাকা দিয়েছেন ঠিকাদারকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা দেননি। ঠিকাদারের বিল থেকে কেটে নেওয়া ভ্যাট ও ট্যাক্সের টাকাও জমা দেননি সরকারি কোষাগারে। এভাবে অর্ধশত কোটিরও বেশি টাকার আর্থিক অনিয়মে জড়িয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (বর্তমানে বরখাস্ত) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। এ কর্মকর্তা এমন বেহিসাবি কাজের কারণে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায়ও। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নানা অনিয়মের অভিযোগেও চলছে বিভাগীয় মামলার তদন্ত। জানা গেছে, চসিকের আলোচিত পোর্ট কানেকটিং রোড সংস্কার ও সম্প্রসারণের ৫০ কোটি টাকার একটি কাজ পায় মেসার্স রানা বিল্ডার্স লিমিটেড এবং মেসার্স রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড ছালেহ আহমদ (জেভি) নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর ইউসিবিএল ব্যাংক কুমিল্লা শাখা থেকে এর বিপরীতে ঋণ নেয় (লিয়েন) প্রতিষ্ঠান দুটি। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ব্যাংকের পরিবর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করেন। চেকের অফিস কপিতে ইউসিবিএল ব্যাংক এবং রানা বিল্ডার্সের যৌথ নাম লেখা হলেও মূল চেকে কেবল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয়। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন চেকে অন্তত ২৫ কোটি টাকা ঠিকাদারকে দিয়ে দেন তিনি। ঠিকাদার কাজ অর্ধেক ফেলে রেখে সব টাকা তুলে পালিয়ে যান। বিষয়টি নজরে এলে করপোরেশনের প্রশাসককে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাইফুদ্দিনের এ অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে চিঠি দেওয়া হয়। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনকেও বিষয়টি লিখিত জানায়। এ অভিযোগের সত্যতা পায় চসিকের তদন্ত কমিটি। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে শোকজ করেন।


একইভাবে মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন বাঁশি নামে এক ঠিকাদারকে জাইকা প্রকল্পের আওতাধীন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশখাল রোডের উন্নয়ন ও গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কাজের জন্য অগ্রিম ৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে এভাবে টাকা দেওয়ায় সাইফুদ্দিনকে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর করপোরেশনের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এছাড়া করোনা মহামারির জন্য সরকার থেকে পাওয়া ৩ কোটি টাকা তিনি রাজস্ব তহবিলে সংমিশ্রণ করায় ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস আপত্তি দেওয়ার পাশাপাশি হিসাবটিও বন্ধ করার নির্দেশ দেন।


চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে কর্তন করা প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিপুল অঙ্কের টাকা নির্দিষ্ট হিসাবে জমা করেননি এ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে একই বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৬ মাসের এ টাকা (প্রতি মাসে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত) জমা করেননি তিনি। ফলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি থেকে বিদায় নিলেও প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অবসরজনিত টাকা পেতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন। অনেকে বছরের পর বছর ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না।


সূত্র অভিযোগ করেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধিত বিলের বিপরীতে ভ্যাট বাবদ ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং আয়কর বাবদ ২ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা কর্তন করে। কিন্তু এ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এ অভিযোগেরও সত্যতা পান তদন্ত কমিটির প্রধান ও চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সাইফুদ্দিনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। করপোরেশনের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম এ বরখাস্তের আদেশ দেন।


শেয়ার করুন