দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টারশিয়ারি ও বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে অন্তত দুই হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন। কিন্তু রোগীদের ওষুধ বিতরণে নেই পর্যাপ্ত জনবল। একইভাবে সারা দেশের অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১২ হাজার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট দরকার। যেখানে ৩ হাজার ২৮৬ জন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট রোগীদের ওষুধ বণ্টনের দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিশ্বমানের অনেক ওষুধ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় ফার্মাসিস্ট সংকটে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে রোগীদের মধ্যে ওষুধের সুষ্ঠু বণ্টন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ওষুধ উৎপাদন থেকে বিপণনের বিভিন্ন ধাপে এর মান নষ্ট হচ্ছে। এসবের ফলে রোগীদের ওপর ওষুধের ভুল প্রয়োগের আশঙ্কা বাড়ছে। অনিরাপদ হচ্ছে রোগীর সামগ্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো ২৫ সেপ্টেম্বর দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্যÑফার্মেসি স্ট্রেংদেনিং হেলথ সিস্টেম’ অর্থাৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে ফার্মেসি।
দিবসটি উদ্যাপনে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টেট ইউনিভর্সিটি অব বাংলাদেশের ফার্মেসি বিভাগের পৃথকভাবে র্যালি, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, লিফলেট বিতরণ ও আলোচনা সভা। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হবে।
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানানÑদেশে এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন ১৭ হাজার ৯৩৭ জন এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। পাশাপাশি ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা পাশ ৫ হাজার ৩৮৯ জন বি গ্রেড ও ৪ মাসের কোর্স সনদধারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৮ জন সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সৃষ্ট ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্টদের জন্য সারা দেশে ৩ হাজার ৫৫৮টি পদের বিপরীতে মাত্র ২ হাজার ৭০০ জন কাজ করছেন। পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তর সৃষ্ট ৯৬৫টি পদের বিপরীতে ৫৮৬ জন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। এছাড়া ইউনিয়ন সাব সেন্টার ও ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৯ হাজার পদ থাকলেও অধিকাংশ ফাঁকা রয়েছে।
একাধিক ফার্মাসিস্ট অভিযোগ করেন, দেশে প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হলেও তাদের ৮০ ভাগ সরাসরি ওষুধ উৎপাদনে কাজ করছেন। হাসপাতাল বা ফার্মেসিতে কাজের সুযোগ না পাওয়ায় প্রতিমাসে দেশ ছাড়ছেন অনেক ফার্মাসিস্ট। যদিও ফার্মাসিস্টদের ওষুধ বিক্রি ও কাউন্সিলিংয়ে কাজে লাগাতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) ৬০০-এর বেশি মডেল ফার্মেসির লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে ৯৫ শতাংশ ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে। সারা দেশে বৈধ-অবৈধ লাখেরও বেশি ফার্মেসিতে ডিপ্লোমাধারী ও কোর্সসম্পন্ন ব্যক্তিরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছেন।