০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:১১:৩০ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে নানা আয়োজনে বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৯-২০২৩
রাজশাহীতে নানা আয়োজনে বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত

আজ শুক্রবার বিশ্ব হার্ট দিবস। “ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটি হৃদয়ের যত্ন নিন” এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নানা কমসূছীর মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালণ করা হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন লক্ষ্মীপুর বাকীর মোড় রাজশাহীর নিজস্ব ভবন হতে সকাল সাড়ে ৯টায় বর্নাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। অতিথি ও সাধারণ জনগণ মিলে র‌্যালি নিয়ে তারা বাকীর মোড় বাইপাস সহ নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে পুনরায় হার্ট ফাইন্ডেশনের সামনে এসে শেষ করেন।


র‌্যালি শেষে হার্ট ফাউন্ডেশন হলরুমে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার ও আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনালহার্ট ফাউন্ডেশন রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মহাঃ হবিবুর রহমান। সেমিনার ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রাজশাহীর সহ-সভাপতি হাসেন আলী।


সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক, বারিন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার শাহাদত হোসেন রওশন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আইসিইউ প্রধান ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ডাক্তার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নওগাঁ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার রাজেশ কুমার ঘোষ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এস.এম সানজিদুল ইসলাম সিদ্দিকী (সবুজ), সেমিনার উপস্থাপনায় ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) ডাক্তার মোল্লা ইফতেখার হোসেন ও হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এ. এস এম সায়েম।


অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রাজশাহীর কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ, ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্যবৃন্দ, সুশীলসমাজের সম্মানিত ব্যক্তিবৃন্দ সহ স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ১০৫ জন হৃদরোগীদের জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য ন্যাশনালহার্ট ফাউন্ডেশন রাজশাহী নাম মাত্র মূল্যে অত্রাঞ্চলের হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দিয়ে যাচ্ছে।


সেমিনার উপস্থাপক ডাক্তার মোল্লা ইফতেখার হোসেন উল্লেখ করেন, হৃদরোগের লক্ষণ, হৃদরোগ প্রতিরোধ ও হৃদরোগ চিকিৎসায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হৃদরোগকে তরান্বিত করে ফলে দৈনন্দিন জীবন-যাপনে ও খাদ্যাভাসে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া এবং কোলেস্টেরল মুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।


তিনি আরো উল্লেখ করেন বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়। উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দু’টি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় – যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার। প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।


সেমিনারে তিনি আরো উল্লেখ করেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারও ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়। যদিও বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে ব্যক্তির হৃতপিণ্ড কাজ বন্ধ করতে পারে বা হার্ট ফেল করতে পারে। এছাড়া, এমন সময় রক্তনালীর দেয়াল সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে।


তিনি আরো বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মস্তিষ্কে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। আর বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে একজন মানুষ অন্ধত্বও বরণ করতে পারেন। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, অনেক সময়ই উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষ্মণ দেখা যায় না। লক্ষ্মণ না থাকলেও দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং রোগী হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তার মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।


অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বয়স ৪০ হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অন্তর ব্লাডপ্রেশার মাপা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর যারা দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের প্রতি সপ্তাহে একবার প্রেশার মেপে দেখা উচিত। তবে একবার রক্তচাপ বেশি দেখা গেলেই যে কারও উচ্চ রক্তচাপ আছে, সেটা বলা যাবে না।তিনি বলেন, পর পর তিন মাস যদি কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, তখনই বলা যাবে যে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।


তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো, ঘাড় ব্যথা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া, অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।


তিনি আরো উল্লেখ করেন উচ্চ রক্তচাপের কারণ সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে, প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে, ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে, দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে এবং শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে । এগুলো নিরাপদ থাকতে নিজেকেই সচেতন হতে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সভা শেষে দিনব্যাপি ফ্রি হার্ট ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়।


শেয়ার করুন