২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৩৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
ঢাবির মল চত্বর: সবুজ মাঠে কংক্রিটের স্তম্ভ, হুমকিতে পরিবেশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১০-২০২৩
ঢাবির মল চত্বর: সবুজ মাঠে কংক্রিটের স্তম্ভ, হুমকিতে পরিবেশ

সবুজ চত্বরে শত শত গাছ। সন্ধ্যার পর হেঁটে গেলে নাকে আসে হরেক রকম ফুলের মনভোলানো সুবাস। কানে বাজে পাখির কলতান। কলাভবন ও রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের মাঝামাঝি এই ফাঁকা জায়গাটুকু যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফুসফুস, যেখানে গেলে মেলে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ। সেই সবুজের মাঝে এখন বসছে কংক্রিটের স্থাপনা। ঢাবির শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্মৃতি হিসেবে মল চত্বরে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেনটেনারি মনুমেন্ট (শতবার্ষিক স্মৃতিস্তম্ভ)।


৭০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩০ ফুট প্রস্থ এবং ২৫ ফুট উচ্চতার এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে অনেক গাছের শিকড় কাটা পড়েছে। মাঠে যেখানে সবুজ ঘাস ছিল, সেখানটা হয়ে যাচ্ছে ইটের মেঝে। আলো-আঁধারির এই চত্বরে জ্বলবে ঝলমলে আলো। এতে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাঘাত ঘটবে এবং মল চত্বর স্বকীয়তা হারাবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মল চত্বরে অনেক গাছ রয়েছে, এখানে পাখিরা আসে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের নিশ্বাস নেওয়ার মতো একটি জায়গায় এভাবে কৃত্রিম মনুমেন্ট তৈরির ফলে মল চত্বর তার স্বকীয়তা হারাবে। গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে গেলে গাছগুলো টিকে থাকতে পারবে না।’


মল চত্বরে এই মনুমেন্ট তৈরির পেছনে খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। ৫৬টি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ‘নিন আর্কিটেক্টস’ এই মনুমেন্টের নকশা প্রণয়ন করে। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মনুমেন্ট তৈরির কাজের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে সেটি ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।


মল চত্বর ঘুরে দেখা যায়, মনুমেন্টের প্রয়োজনে মল চত্বরে ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য বসানো তিনটি ম্যানহোলের ঢাকনা এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। দেয়াল তৈরির কাজে পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে ইট। বৃষ্টি ও নির্মাণযজ্ঞের কারণে মল চত্বর এলাকা কাদায় ভরে গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে।


শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা সংকটে জর্জরিত। সবচেয়ে বড় সংকট শিক্ষার্থীদের আবাসনে। এত এত সংকটের মধ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে মনুমেন্ট তৈরি করাকেও ভালো চোখে দেখছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সালেহ উদ্দিন সিফাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, শতবর্ষী একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপনে মনুমেন্ট স্থাপন স্বাভাবিক ব্যাপার‍। কিন্তু শত বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছি কি না, সেটা এখন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন‍। ছাত্রদের নিদারুণ আবাসনসংকট, ক্লাসরুম সমস্যা, হলের দেয়ালের খসে পড়া পলেস্তারা ইত্যাদি দেখেই বোঝা যায়‍, বিশ্ববিদ্যালয়টি সময়ের ভেলায় শত বছর পাড়ি দিলেও এর কোনো বস্তুগত ও গুণগত বিবর্তন ঘটেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাই আমাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী নতুন আবাসিক হল নির্মাণ এবং বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ হলগুলো সংস্কার করা হোক।’

 ‘শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আবাসনসংকট রয়েছে। আমাদের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে, তবে কোনোটি বাদ দিয়ে কোনোটি নয়। শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট সমাধানের জন্য হল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে, কাজও চলমান। শতবর্ষে মনুমেন্ট তৈরির কাজ নিয়মিত তদারক করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে আশা রাখি।’


পরিবেশ ও গাছ বিনষ্টের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য বলেন, ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল সার্ভের মাধ্যমে সব গাছের অবস্থান, আকৃতি, কাণ্ড ও পাতার ব্যাপ্তি শনাক্ত করে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। মল চত্বরে থাকা গাছগুলো অক্ষুণ্ন রেখে পরিবেশ উপযোগী গাছ রোপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।


শেয়ার করুন