বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞান গবেষকের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১১ জন শিক্ষক এবং এক শিক্ষার্থী স্থান পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’-এর সমন্বিত জরিপে চলতি বছরের গত ৪ অক্টোবর এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তালিকায় স্থান পাওয়া ১১ জন শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. মুশফিকুর রহমান, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল আলিম আল-বারি, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলি আকবার, বেটানি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহমাদ হুমায়ুন কবির, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম এইচ. মন্ডল, ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিতোষ বিশ্বাস, ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. ইয়ামিন হোসাইন, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাকের হোসাইন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আশিক মোসাদ্দিক।
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ২% গবেষকদের তালিকাভুক্ত হয়েছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শফি মাহমুদ। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থান করছেন।
এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশনে আরও ৪ জন শিক্ষকের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাফিলিয়েশনে একজনের নাম এসেছে। তার নাম মোহাম্মাদ আব্দুল হাদি। তিনি একটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। তবে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
স্কোপাস ডাটাবেজের পদ্ধতিগত কারণে বাকি ৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ স্কোপাস ডাটাবেজের পদ্ধতি হলো একাধিক গবেষকের নামের বানান হুবহু একই হলে ওই সকল গবেষকের নামে একটাই অ্যাকাউন্ট থাকবে যদি না তারা ভিন্ন-ভিন্নভাবে নিজেদের অ্যাকাউন্ট তৈরির দাবি না করেন। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকদের নাম হুবহু একই হলে বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়।
এই জটিলতার কারণে বাকি তিনজন গবেষকের ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন আসলেও তারা রাবির কোনো শিক্ষক নন। তারা রাবির অ্যাফিলিয়েশন ব্যবহার করেছেন মাত্র।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশনে নাম আসা এই তিন শিক্ষক হলেন মাহফুজুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. নুরুল ইসলাম। তাদের নামের সঙ্গে মিল আছে এমন রাবির সকল শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে বিষয়টি প্রতিবেদক নিশ্চিত হয়েছেন।
বিজ্ঞান প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৪টি উপক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ করে ২ লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মোট সেরা গবেষকের সংখ্যা ১৭৭ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ, (আইসিডিডিআর, বি) এর ১৪ জন। পাশাপাশি এই তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১০ জন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষক রয়েছেন।
এই তালিকায় নাম আসা ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলি আকবার বলেন, গত বছরও এই তালিকায় আমার নাম এসেছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সকল গবেষকের নাম এসেছে তাতে সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশটা খুব একটা ভালো না। টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিং এ আমাদের ‘গবেষণার পরিবেশ’ সূচকে স্কোর পেয়েছে ৯ দশমিক ৩। আমি কখনো আর্থিক সহযোগিতা চাই না। আমি চাই গবেষকদের গবেষণা করার ভালো একটা পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এটাই আমার দাবি।
তালিকায় স্থান পাওয়া সেরা গবেষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। গবেষকদের অভিনন্দন বার্তায় উপাচার্য বলেন, বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞান গবেষকের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক এবং একজন শিক্ষার্থী স্থান পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনন্দিত। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এ স্বীকৃতি অর্জনে শিক্ষক ও গবেষকরা অনুপ্রাণিত হবেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও গবেষক এই তালিকাভুক্ত হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।