২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৬:৫২:২৩ পূর্বাহ্ন
গাজা এক মৃত্যু উপত্যকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১০-২০২৩
গাজা এক মৃত্যু উপত্যকা

ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাসের হামলার জবাবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। এরই মধ্যে অবরুদ্ধ অঞ্চলটির বিদ্যুৎ, পানি, খাবার ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলি জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ কঠোর ভাষায় বলে দিয়েছেন, হামাস জিম্মিদের না ছাড়া পর্যন্ত পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ পুনর্বহাল করা হবে না। এতে অনবরত বোমা ও গোলার ঘায়ে বিপর্যস্ত সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র গত বুধবার জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। জেনারেটর দিয়ে কোনোমতে কাজ চালাচ্ছে গাজাবাসী। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের অত্যাবশ্যকীয় কাজ চলছে তেলচালিত জেনারেটর দিয়ে। অথচ গাজার প্রধান হাসপাতালে তেল আছে মাত্র কয়েক দিনের।

এ অবস্থায় রেড ক্রিসেন্টের আঞ্চলিক পরিচালক ফাব্রিজিও কারবনি গতকাল বলেন, ‘গাজায় বিদ্যুৎ নেই, হাসপাতালগুলোও তাই বিদ্যুত্হীন। নবজাতকদের ইনকিউবেটরে রাখা এবং বয়স্কদের অক্সিজেন সরবরাহ করার কাজ ঝুঁকিতে রয়েছে। কিডনি ডায়ালিসিস বন্ধ, এক্স-রে সেবাও দেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালই মর্গে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

শিশুসহ আহতদের আর্তনাদে হাসপাতাল প্রাঙ্গণের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে তাদের সেবা দেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে।

ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হলে কোনো ধরনের মানবিক সুযোগ দেওয়া হবে না।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) কাত্জ বলেন, ‘কোনো বৈদ্যুতিক সুইচে টিপ পড়বে না। কোনো পানির হাইড্র্যান্ট খোলা হবে না।


কোনো জ্বালানির ট্রাকও ঢুকবে না, যতক্ষণ না তারা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেয় এবং তারা বাড়ি না ফেরে। মানবতার জন্যই মানবিকতা। কেউ আমাদের নৈতিকতা শেখাতে আসবেন না।’গত শনিবার সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরায়েলের অন্তত এক হাজার ৩০০ জন এবং ফিলিস্তিনের অন্তত এক হাজার ৪১৭ জন নিহত হয়েছে। উভয় পক্ষের আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এ ছাড়া কমপক্ষে দেড় শ ইসরায়েলিকে ধরে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, জিম্মিদের মধ্যে ৯৫ জনকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে।

ইসরায়েল সরকার বুধবার জাতীয় সরকার ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। বিরোধী দলের নেতাকে দেওয়া হয়েছে এই মন্ত্রিসভার বড় দায়িত্ব। হামাসের সঙ্গে সংঘাতকে কেন্দ্র করে অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে দেশটিতে।


মানবিক সংকট চরমে


ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় শত শত ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ায় এবং প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। সাড়ে ছয় লাখের বেশি বাসিন্দা মারাত্মক পানিসংকটের কবলে পড়েছে। জনপদগুলোর পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্জ্য পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে।


জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউর ৯২টি আশ্রয়শিবিরে দুই লাখ ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। আরো অনেকের ঠাঁই হয়েছে সরকারি স্কুল ও অন্যান্য ভবনে।


জাতিসংঘ জানিয়েছে, হাজার হাজার বাড়ি ধ্বংস হওয়া ছাড়াও ৫৬০টি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আরো অন্তত ১২ হাজার ৬০০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি বিমানের বোমা ও কামানের গোলা আর রকেট হামলা থেকে রক্ষা পেতে গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ও শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বহু মানুষ। তবে হাসপাতাল লক্ষ্য করেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।


গাজার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র সিফা হাসপাতালের চিকিৎসক তালাল তালহা দাবি করেন, আহত ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে যাওয়ার সময় তিনি এবং তাঁর তিন সহকর্মী ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি প্রাণে বাঁচলেও তিন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।


স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসে পড়েছে


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অঞ্চলটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসে পড়েছে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কোনো শয্যা খালি নেই। অস্ত্রোপচার কক্ষে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে রয়েছে। আহতদের হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ১৫টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ৯টি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।


চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। ১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স ও আটটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র আংশিক অথবা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


সংগঠনটির শোহাইব সাফি বলেন, ‘অ্যাম্বুল্যান্স হামলাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ইসরায়েল বার্তা দিতে চায়—আহত বা আটকে পড়াদের উদ্ধার করা যাবে না।’


শেয়ার করুন