ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডটি (চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত) প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন থেকে ৬ লেনে উন্নীত করে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাজটি পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা হলে এ সড়কের যানজট কমে আসবে বলে সওজ কর্তৃপক্ষ জানান। এ সড়কের তিনটি স্থানে থাকছে আন্ডারপাস, দুটি স্থানে দুটি ফুটওভারব্রিজ ও সড়কের দুপাশে থাকছে ড্রেনসহ ফুটপাত ও লাইটিংসহ বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য বর্ধন কাজ। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডটি দৃষ্টিনন্দন সড়কে পরিণত হচ্ছে। সড়কটির আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে আশপাশের পরিবেশও। এ সড়ককে ঘিরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠতে শুরু করেছে আধুনিক বহুতল ভবন। সড়কের সেই চিরচেনা আদিরূপ বদলে যাওয়ায় খুশি নগরবাসীও। সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সব মিলিয়ে সড়কটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আট দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করায় এ সড়কের যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
জানা যায়, শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াতের অন্যতম সড়ক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড। এ সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড স্থানে মিলিত হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীসহ অন্যান্য আশপাশের লোকজন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন। এ সড়ক নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে রাজধানী ঢাকায় চলাচলের অন্যতম ও প্রধান একটি সড়ক। শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে অবস্থিত বন্দর উপজেলার বহু লোকজন শহর হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে এ সড়কটি ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও এ সড়কের আশপাশে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের সরকারি প্রায় সকল অফিস-আদালত। এ সড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ ও জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা পরিষদ, এলজিইডি কার্যালয়, পাসপোর্ট অফিস, জেলা কারাগার, জেলা নির্বাচন অফিস ও শিল্প পুলিশ-৪’র পুলিশ লাইন্সসহ নানা ধরনের স্থাপনা রয়েছে। ফলে এ সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ সড়কটির সাইনবোর্ড, ভুঁইঘর, জালকুড়ি ও শিবু মার্কেট এলাকায় প্রায়ই সৃষ্টি হয় যানজট। এ কারণে সড়কটি চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডটি (সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া) চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ প্রকল্পের কাজটি শেষদিকে রয়েছে।
মোট ব্যয় ৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ॥ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ৭ জুন তারিখে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রশাসনিক আদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ১৮ জুন। এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে আবারও সময় বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ এ প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
ছয় লেনের সড়কে যা থাকছে ॥ সওজ সূত্রে জানা যায়, সড়কটি আধুনিকায়ন করে চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। সড়কটি আট দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শুরু হয়ে শহরের চাষাঢ়ায় গিয়ে মিলেছে। সড়কটি এখন গড় চওড়া হচ্ছে ৪৩ দশমিক ৬ মিটার। উভয়পাশের্^ প্রধান পেভমেন্ট ৯ দশমিক ৭ মিটার, উভয় পাশের্^ সার্ভিস লেন ৫ দশমিক ৫ মিটার, উভয়পাশের্^ এইচবিবি এক দশমিক আট মিটার, উভয়পাশের্^ আরসিসি ড্রেন আট দশমিক এক মিটার, সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসনের অফিসের সামনে দুটি ফুটওভারব্রিজ, ভুঁইঘর, জালকুড়ি ও শিবু মার্কেট বাসস্ট্যান্ডে তিনটি আন্ডারপাস থাকছে। এ ছাড়াও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও চানমারী এলাকায় দুটি ইউটার্ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় ও মাতুয়াইলে সাইনবোর্ড ইন্টার সেকশন দুটি ইউটার্ন রিজিড পেভমেন্ট ৪০৫ মিটার, কালভার্ট সম্প্রাসারণ ৯টি। ৩০ মিটার পর পর থাকছে সড়ক বাতি। প্রস্তাবনায় রয়েছে ভুঁইঘর, এসবি গার্মেন্টস ও স্টেডিয়ামের বিপরীতে তিনটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ॥ এ সড়কের তিনটি স্থানে থাকছে আন্ডারপাস, দুটি স্থানে দুটি ফুটওভারব্রিজ ও সড়কের দুপাশে ড্রেনসহ ফুটপাত ও লাইটিংসহ বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য বর্ধন কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সড়কটি ধীরে ধীরে দৃষ্টিনন্দন সড়কে পরিণত হচ্ছে। সড়কটির আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে আশপাশের পরিবেশও। এ সড়ককে ঘিরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠতে শুরু করেছে আধুনিক বহুতল ভবন।