২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:০০:৫৫ অপরাহ্ন
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী):বাগ্‌যুদ্ধে নবীন-প্রবীণেরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী):বাগ্‌যুদ্ধে নবীন-প্রবীণেরা

দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে রাজনীতির মাঠে ফিরেছেন নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা লতিফ সিদ্দিকী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাঁর এ প্রত্যাবর্তনে ‘খুশি’ হননি ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী। বিভিন্ন সময় তাঁকে তুলাধোনা করতে দেখা গেছে এই দুজনকে। লতিফ সিদ্দিকীও পথসভা ও গণসংযোগে তাঁদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে নবীন-প্রবীণদের এ বাগ্‌যুদ্ধই টাঙ্গাইলের এখন আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।


নেতিবাচক মন্তব্যের জেরে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ, প্রাথমিক সদস্য পদ ও মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। এ ঘটনায় কারাভোগও করতে হয় তাঁকে। পরে সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়ে প্রায় অর্ধযুগ নিভৃতে সময় কাটান তিনি।


বীর মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে চারবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে একাধিকবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তবে তিনি এবার টাঙ্গাইল-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল হাজারী হলেন লতিফ সিদ্দিকীর একসময়ের ‘শিষ্য’।


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে রাজনীতির মাঠে নামেন লতিফ সিদ্দিকী। ২৪ আগস্ট তিনি বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করেন। ৩০ আগস্ট টাঙ্গাইলের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। তখন থেকেই গুঞ্জন শুরু।


লতিফ সিদ্দিকী গত ১৯ সেপ্টেম্বর দেলদুয়ারের আটিয়ায় শাহান শাহ আদম কাশ্মীরির মাজার জিয়ারত করতে গেলে মুরাদ সিদ্দিকী বাধা দেন। এই হামলা নিয়ে লতিফ-মুরাদের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। মাজার জিয়ারত শেষে লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতীর যোকারচরসহ কয়েকটি স্থানে গণসংযোগ করেন। পথসভায় তিনি মুরাদকে সন্ত্রাসী ও টেন্ডারবাজ হিসেবে উল্লেখ করেন। 

২৯ সেপ্টেম্বর কালিহাতীর ছাতিহাটি গ্রামে লতিফ সিদ্দিকী ও কাদের সিদ্দিকী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মা-বাবার কবর জিয়ারত করেন। 

এ সময় তাঁদের সঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীও ছিলেন। ওই দিন বিকেলে লতিফ সিদ্দিকী বল্লা ও রামপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন। এর পর থেকেই শুরু হয় বাগ্‌যুদ্ধ।


১৯ অক্টোবর কোকডহরাতে এক জনসভায় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার সঙ্গে আজ পর্যন্ত কেউ বেয়াদবি করে নাই। এই ছেলেটা (সোহেল হাজারী) আমার গাড়ি ভেঙেছে। সাদা মানুষটা যে এত কালো হয়, তা আগে বুঝি নাই। ব্যাটা বেয়াদব। আমার সম্পর্কে আর একটি কথা বললে ধরে ফেলব।’


পরদিনই ২০ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীর তীব্র সমালোচনা করে সোহেল হাজারী বলেন, ‘আপনি (লতিফ সিদ্দিকী) মহা বেয়াদব। আপনি আমার নবীর বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আপনি চোখ রাঙাবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।’ 

সোহেল হাজারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তাঁকে (লতিফ সিদ্দিকী) মন্ত্রিত্ব দিয়েছিলেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য বানিয়েছিলেন। তিনি কৃতকর্মের কারণে সব খুইয়েছেন। তারপর তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নৌকার বিরুদ্ধে ট্রাক নিয়ে এসেছিলেন। কালিহাতীবাসী লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন।’


মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী একজন ভণ্ড। তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে, নৌকার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখন কালিহাতীবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করতে এসেছেন। মুখে বলছেন আওয়ামী লীগ। আবার গামছা গলায় ঝুলিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন।’


গত রোববার এলেঙ্গার পথসভায় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি মুসলমান। আমি আওয়ামী লীগার। আমি রাজনীতির মাঠে এসেছি। আমি নির্বাচন করব, তা তো বলিনি। জনগণ চাইলে আমি নির্বাচনে আসব।’ তিনি বলেন, ‘আমার অধিকার, মানুষের অধিকার যারা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের ক্ষমা করা হবে না। যারা আমাকে লাল কার্ড দেখাতে চায়, তাদের আপনারা কালো পতাকা দেখাবেন।’


কালিহাতীর বাসিন্দা কিংবা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এই বাগ্‌যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেও প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে কেউ রাজি নন। তবে ছাত্রলীগ নেতা শাহেদ মিয়া বলেন, ‘গুরু-শিষ্যের মধ্যে আমরা স্নেহ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি। আমরা সেটিই কামনা করি।’ 


শেয়ার করুন