নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা। চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিরোধীদের আন্দোলন ও সরকারদলীয় পাল্টা সহনশীল কর্মসূচিতে সরব ছিল রাজনীতির মাঠ। সহনশীল এই পরিস্থিতি হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনার পর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ফিরেছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। এসব কর্মসূচি ঘিরে ভাঙচুরের পাশাপাশি শুরু হয়েছে জ্বালাও-পোড়াও। এসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার সার্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে চায় না বলে জানা গেছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি, চোরাগোপ্তা হামলা রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, নাশকতা সংক্রান্ত পুরোনো মামলা সচল করা, কেপিআইভুক্ত স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সামাল দেবে সরকার। নাশকতার মামলার বিচারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার প্রমাণ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে-বিদেশে সরকারবিরোধী প্রচারণা রোধে এসব ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে।
নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারসহ যা যা করা দরকার তা-ই শতভাগ করছে। জনগণের জানমাল নিরাপত্তায় যা যা করা দরকার, তা-ই করব।’
জানা গেছে, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের মামলার বিচার আলাদাভাবে করার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। ইতোমধ্যে নাশকতার মামলা দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এবার কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অগ্নিসন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হয়, তা জানা আছে, এবার তাই করা হবে।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল প্রায় এক বছর ধরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকলেও মোটাদাগে তা ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। ওই দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে। নৃশংস হামলা চালিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে যুবদলের একজন কর্মীও মারা যান। বাস, গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। হামলা চলে সাংবাদিকদের ওপরও। এসব ঘটনার জেরে দীর্ঘদিন পর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আর এসব কর্মসূচি ঘিরে ঘটছে যানবাহনে আগুন দেওয়াসহ নাশকতার নানা ঘটনা।
জানা গেছে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় নাশকতা ও সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলে সরকার আশঙ্কা করছে। এ কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে নানাবিধ পদক্ষেপ। সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে বিশেষ নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে কেপিআইভুক্ত এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।