২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৭:২৯:০৫ অপরাহ্ন
অবরোধে প্রতি ২ ঘণ্টায় পুড়েছে একটি করে গাড়ি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১১-২০২৩
অবরোধে প্রতি ২ ঘণ্টায় পুড়েছে একটি করে গাড়ি

বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধকালে রাজধানীর রাজপথসহ সড়ক-মহাসড়কে আতঙ্কের হল্কা ছড়িয়েছে আগুন।  বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধের ৬০ ঘণ্টায় ৩১টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি ২ ঘণ্টায় একটি করে গাড়ি পুড়েছে। রাস্তায় পিকেটিং, মিছিল ও সংঘর্ষ কম হলেও আগুন আতঙ্কেই অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল অবরোধের তিন দিন।


অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে গুলি ও সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ৪ জনের। গ্রেপ্তার সহস্রাধিক। ঢাকায় বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে ওয়ারী-মিরপুর এলাকায়, কম গ্রেপ্তার গুলশান-উত্তরায়। অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় ও শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আগের দুদিনের তুলনায় শেষ দিন জনমানুষ ও যান চলাচল ছিল বেশি।


পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য এই অগ্নিকাণ্ডে জড়িত ছিল সেটা প্রমাণ হয়েছে। কারা অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা আপনারা জানেন এবং বুঝতে পেরেছেন। দৃষ্কৃতকারীদের আক্রমণে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। এর পরও পুলিশ উত্তেজিত না হয়ে সাহসিকতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।


গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, হত্যা ও নাশকতার মামলার বিষয়গুলো তদন্তাধীন। তদন্তে যার বিরুদ্ধে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাকে সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গ্রেপ্তার করছি।


ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৪টি গাড়িতে আগুন লাগার খবর তারা পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ১২টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে রাজধানীতে। গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, নারায়ণগঞ্জে পুড়েছে ৭টি গাড়ি। চট্টগ্রাম বিভাগে পোড়ানো হয়েছে ৮টি গাড়ি। এ ছাড়া গাড়ি পোড়ানো হয়েছে রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহে। অগ্নিদগ্ধ যানবাহনের মধ্যে ১৮টি বাস, ৪টি কাভার্ড ভ্যান, ৫টি ট্রাক, ১টি প্রাইভেট কার ও ৩টি মোটরসাইকেল। এ ছাড়া পুড়েছে ২টি বাণিজ্যিক পণ্যের শোরুম এবং একটি পুলিশ বক্স।


প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দিনের চেয়ে রাতেই অগ্নিকা- বেশি ঘটেছে। ৩৪টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৫টার মধ্যে ১৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।


অবরোধের শেষ দিন গতকালও রাজধানীতে ৩টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভোর পৌনে ৫টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সকাল ৭টার দিকে আজমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচে পুড়িয়ে দেওয়া হয় পরিস্থান পরিবহনের একটি বাস। সন্ধ্যায় মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে পরিস্থান পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।


বিএনপি বলছে, অবরোধের তিন দিনে সাবেক সাত এমপিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে দলটির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং তৎপরবর্তী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল পর্যন্ত দলটির ৪ হাজার ৫৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত হয়েছেন ৮ জন এবং আহত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী। এ সময় মামলা হয়েছে ৯৬টি। গতকাল বিএনপির ২৭২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; মামলা হয়েছে ১৬টি।


বিএনপি জানিয়েছে, অবরোধের তিন দিনে তাদের চারজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ, ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি বিল্লাল মিয়া পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বুধবার সিলেট জেলাধীন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালবাজারে দিলু আহমদ জিলু নিহত হন। একই দিন কুমিল্লায় নিহত হন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাকির হোসেন।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরিসংখ্যান বলছে, বিএনপির মহাসমাবেশ ও হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে গত ৭ দিনে ১ হাজার ৮০২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক গ্রেপ্তার ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের দিন। এ দিন গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির ৬৯৬ নেতাকর্মীকে।


পুলিশের তথ্যানুযায়ী, গ্রেপ্তারের অঞ্চল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বাধিক গ্রেপ্তার হয়েছে মিরপুর, ওয়ারী ও লালবাগ বিভাগে; কম গ্রেপ্তার হয়েছে উত্তরা ও গুলশানে। অবরোধের প্রথম দুদিনে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের গ্রেপ্তার হয় ৭৪ জন। উত্তরা এলাকায় সবচেয়ে কম ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার অবরোধের তৃতীয় দিনে রাজধানীতে আগের দুদিনের চেয়ে কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির আগে বৃহস্পতিবার সাধারণত স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ভিড় থাকে টার্মিনালগুলোতে।


সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি ও সায়েন্সল্যাব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের গণপরিবহনের চলাচল গত দুদিনের তুলনায় বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল গতকালও অনেকটা কম ছিল। তবে বিভিন্ন অফিস-আদালতের যানবাহনের চলাচল চোখে পড়েছে। তৃতীয় দিনে গণপরিবহনের পাশাপাশি অফিসগামী মানুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল।


ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে গতকালও সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। চেকপোস্টে মোটরসাইকেল, গাড়ি ও সন্দেহভাজনদের ব্যাগে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে পুলিশকে। এ ছাড়া প্রধান সড়কের পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় র?্যাব-পুলিশের জোরদার টহল চোখে পড়েছে। গত কয়েকদিনের মতো গতকালও বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের মূল ফটক ছিল তালাবদ্ধ। কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।


শেয়ার করুন