০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৭:২৭:১৯ পূর্বাহ্ন
চেম্বারে স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাবি চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৩
চেম্বারে স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাবি চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত

নিজ চেম্বারে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক রাজু আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রোববার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।


এর আগে, ডা. রাজু আহমেদকে দ্রুত বহিষ্কার, গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রোববার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেন ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা৷ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধন শেষে শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে দুটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের উপপ্রধান ডা. রাজু আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ডা. রাজুর নামে আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।


অভিযোগ তদন্তের জন্য যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধবিষয়ক অভিযোগ কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান জনসংযোগ প্রশাসক।


কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ক্লাব ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখাসহ প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে রাজুর দ্রুত বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, জনসংযোগ প্রশাসক ও ছাত্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে তালা খুলে দেওয়া হয়।


এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে, ‘বিচার চাই’ ‘এক দফা এক দাবি লুইচ্চা রাজুর ডাক্তারি সনদ বাতিল চাই’ ‘ক্যাম্পাসে হয়রানি কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ ‘আর নয় নিরবতা প্রতিবাদে প্রতিরোধ’ “রাজুর কালো হাত বেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও”  “নারীর প্রতি সহিংসতা আর কত?’ ‘যৌন হয়রানির বিচার নাই প্রশাসন জবাব চাই’ ‘stop sexul harrassment’ ‘stop sexual violence in campus’ ‘it is not a joke, it is sexul harrassment, no excuse’ ‘ Where is my safety’ লিখা সম্বলিত প্লাকাড দেখা যায়।


মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদা খালেক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে এই ধরনের কথা বার বার বলতে আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে। যৌন নিপীড়নের কাজ গুলো যখন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক হয় তখন লজ্জায় আমাদের মুখ লুকানোর জায়গা থাকে না। নারীরা যেখানে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে সেখানে এই ঘটনা গুলো ঘটছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষক সেবা নিতে যান। হাইকোর্ট নির্দেশিত প্রত্যেক শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল আছে।  আমাদের এখানে যে সেল আসে সেখানে দ্রুত এই বিষয় সহ পূর্বে যে ঘটনা গুলো ঘটেছিল সেগুলোর দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।


বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, কোন যৌন নিপীড়ক বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকার অধিকার রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুটি কারণে চাকরিচ্যুত হয় তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে নৈতিক স্খলন। এই ঘটনার পরে আমরা আরো অনেক জায়গা থেকে তার বিরুদ্ধে এমন পূর্বের অভিযোগের কথা শুনতে পাচ্ছি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাও তার হয়রানির শিকার হয়েছ। আজকে সবাই এক সাথে হয়েছে৷ এমন কুলাঙ্গারকে আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চাই না।


বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, ভাষার ব্যবহার, হয়রানি মূলক মন্তব্য, নানা রকম কুৎসা রটনা, নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী,  কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অশ্লীল মন্তব্য- এগুলো সবই যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়ন পর্যায়ে পড়ে। এই যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞাকে আমরা শুধুমাত্র ধর্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছি তার বাহিরে নিতে চাচ্ছি না, নিপীড়ককে নিপীড়ক বলতে দ্বিধাবোধ করছি- এটা খুবই পরিতাপের বিষয়। রাজু এবং তাকে সহায়তাকারী কিছু চিকিৎসক ভিক্টিম এবং তার মাকে সামজিক ভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে। থানাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার না করলে এই ধরনের ঘটনা গুলো বাড়বে। যারা তার পক্ষাবলম্বন করছে তারাও সমদোষে দুষ্টু। নিপীড়নকারীদের প্রশ্রয় দাতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন,

আমি সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম। আমি জানি এখনকার বিধি ব্যবস্থা গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন আছে সেখানে রাজুকে বহিষ্কার করতে আর কোন বাঁধা নেই। সে দুষ্কৃতিকারী, নারী নির্যাতনকারী ও মানসিকভাবে বিকলঙ্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করবার তার আর কোন অধিকার নেই।


প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরীর তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে যৌন হয়রানির এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবর) সকালে ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ডা. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রাজু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক।


শেয়ার করুন