০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৩:০১:০৭ পূর্বাহ্ন
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করল ইসরায়েল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১১-২০২৩
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করল ইসরায়েল

কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সরকার গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য চুক্তি অনুমোদন করেছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘চুক্তি মানে যুদ্ধ বন্ধ হবে না।’ এদিকে হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্পর্কে আরো বিস্তারিত সামনে এনেছে। ফিলিস্তিনি এই গোষ্ঠী নিশ্চিত করেছে যে, উভয় পক্ষ থেকে অস্থায়ী এ যুদ্ধবিরতি চার দিন স্থায়ী হবে।

টেলিগ্রামে শেয়ার করা একটি বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে- এই যুদ্ধবিরতির অর্থ এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার সব এলাকায় সামরিক যান চলাচল বন্ধ করবে। চিকিৎসা ও জ্বালানি সরবরাহসহ শত শত মানবিক সহায়তা ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেবে। দক্ষিণ গাজায় ড্রোন হামলা ও নজরদারি চারদিন বন্ধ থাকবে। ড্রোন চলাচল স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার জন্য উত্তরে থামবে।

যুদ্ধবিরতি চলাকালীন, ইসরায়েল ‘গাজা উপত্যকার সমস্ত অঞ্চলে কাউকে আক্রমণ বা গ্রেপ্তার না করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। সালাহ আল-দ্বীন স্ট্রিটে চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।এদিকে ইসরায়েলি সরকার বলেছে, দেশটির সরকার সমস্ত জিম্মিকে দেশে ফেরত নিতে বাধ্য। সরকার এই লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পর্যায়ের রূপরেখা অনুমোদন করেছে।

সে অনুসারে কমপক্ষে ৫০ জন জিম্মিকে (মহিলা এবং শিশু) চারদিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে, এই সময়ে লড়াইয়ে বিরতি দেওয়া হবে। অতিরিক্ত দশজন জিম্মিকে মুক্তি দিলে বিরতিতে একটি অতিরিক্ত দিন বাড়বে।তবে ইসরায়েল সরকার, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা পরিষেবা দানকারীরা সমস্ত জিম্মিকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে ও হামাসকে নির্মূলের জন্য এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রতি আর কোনো নতুন হুমকি হবে না, তা নিশ্চিত করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

এর আগে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে প্রথমবারের মতো জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হামাসপ্রধান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।


যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছুদিন ধরে ঘোর আপত্তি জানিয়ে আসা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও অগ্রগতির কথা বলেছেন।


গত রাতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠক করেন নেতানিয়াহু।এদিকে গাজায় সংঘাত বন্ধে বিশেষ সম্মেলন করেছে ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো। একই অভিপ্রায় নিয়ে পৃথক উদ্যোগে চীন সফর শেষে রাশিয়ায় পৌঁছেছেন মুসলিমবিশ্বের প্রতিনিধিরা।

এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াও বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সন্নিকটে। তিনি এক বিবৃতিতে তখন জানান, তাঁরা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন। যুদ্ধবিরতির ধরন নিয়ে তিনি কিছু জানাননি। তবে হামাসের এক কর্মকর্তা আলজাজিরাকে জানান, যুদ্ধবিরতির নির্দিষ্ট সময়সীমা, গাজায় মানবিক সহায়তা যাওয়ার পথ সুগম করা ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বদলে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তিকে কেন্দ্র করে আলোচনা করা হয়েছে।


এদিকে গাজা উপত্যকায় হামাসের আটকে রাখা জিম্মিদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমি সুখবরের আশা করছি।’ ইসরায়েলের প্রধান মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ‘থ্যাংকস গিভিং’ পর্বের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।


চুক্তির ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, জিম্মিদের সম্ভাব্য মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।


গাজায় হামলা অব্যাহত


যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে নেপথ্যে আলোচনার মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা থেমে নেই। উপত্যকার মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে গত সোমবার রাতে এক বিমান হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে। অন্যদিকে উত্তরের জাবালিয়া শহর ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। এ ছাড়া সম্প্রতি লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, সোমবার রাতভর সেখানেও থেমে থেমে গোলাগুলি চলেছে।


ব্রিকসের বিশেষ সম্মেলন


ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গতকাল ব্রিকসের বিশেষ ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ ব্রিকস নেতারা গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেন।


যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে নতুন ছাঁচে ফেলার লক্ষ্যে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—এই পাঁচটি উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছে ব্রিকস জোট।


এবার রাশিয়ায় মুসলিম নেতারা


গাজা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতকাল মস্কো পৌঁছেছেন আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। সৌদি আরব, জর্দান, মিসর, প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রধান ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত সোমবার তাঁরা বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।


শেয়ার করুন