দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ক্রমশই বাড়ছে। তফসিল ঘোষণার পর দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ২৮টি দলই ভোটের লড়াইয়ে নামার কথা জানিয়েছে। ভোটে যাবে না বলেছে ১৫টি রাজনৈতিক দল। একটি দল ২৫ নভেম্বর তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আমাদের সময়কে জানিয়েছে।
বিএনপিসহ ১২টি দল ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অনড়। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলটি এখন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। তবে কল্যাণ পার্টিসহ বিএনপির শরিক কয়েকটি দল ভোটে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ এবং ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। এ ভোটে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়ার বিষয়ে এতদিন নানা জল্পনা-কল্পনা চললেও শেষ পর্যন্ত তারা ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবার জোট বা আসন সমঝোতায় না গিয়ে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। মনোনয়ন ফরম বিক্রির চতুর্থ দিন গতকাল বুধবার দলীয় চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
এদিকে ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিও সিদ্ধান্ত পাল্টে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সে লক্ষ্যে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গ ছেড়ে ৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ঝুঁকি মেনেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ তারা চান, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ হোক। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে যুক্তফ্রন্টের। জোটের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। কল্যাণ পার্টি ছাড়া যুক্তফ্রন্টের বাকি দুই দল হলো- বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন)। যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং সর্বশেষ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোটে ছিলেন।
ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে যে ২৮টি দল সেগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল পিপলস্? পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাকের পার্টি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।
১৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না যাওয়ার কথা জানিয়েছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)। ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) এখনো ভোটে না যাওয়ার অবস্থানে। তবে আগামী ২৫ নভেম্বর চরমোনাই মাহফিল শেষে ভোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।