২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:১৯:৩৩ অপরাহ্ন
রমনা পার্কের রেস্তোরাঁ: প্রভাবশালীর চাপে বদলে গেল ইজারাদার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৮-২০২৩
রমনা পার্কের রেস্তোরাঁ: প্রভাবশালীর চাপে বদলে গেল ইজারাদার

রাজধানীর ‘ফুসফুস’খ্যাত রমনা পার্কের ভেতরে থাকা রেস্তোরাঁটি পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য দরপত্র আহ্বান করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারার জন্য মনোনীত করেছিল দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। কিন্তু প্রভাবশালী এক নেতার চাপে রাতারাতি বদলে গেছে সেই সিদ্ধান্ত। এখন সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাদ দিয়ে তার চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম দর দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রেস্তোরাঁটি ইজারা দেওয়ার আয়োজন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এতে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আয় হারাবে সরকার।


রমনা পার্কের রেস্তোরাঁটি ইজারা দেওয়ার জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে ছয় দরদাতা অংশগ্রহণ করলেও চারটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রেসপনসিভ’ হিসেবে বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, এই চার দরদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৮০ টাকা দর প্রস্তাব করে হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল। বাকি তিন দরদাতার মধ্যে ইউরো এশিয়ানো ৩ কোটি ৩ লাখ, হোটেল সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল ১ কোটি ২৪ লাখ ৮ হাজার এবং কিভাসান নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৯৭ লাখ ১৫ হাজার ১৬৮ টাকা দর প্রস্তাব করে।


সাত সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বোচ্চ দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠান হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনালকে অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু পরে অজানা কারণে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যায়। সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাদ দিয়ে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ইউরো এশিয়ানোর কাছেই রেস্তোরাঁটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে।


সবকিছু নিয়মমাফিক চূড়ান্ত করার পর কেন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে কেউ মুখ খুলছেন না। এ বিষয়ে কথা বলতে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে বিষয়টি লিখে এসএমএস করা হলেও কোনো সাড়া দেননি।


যোগাযোগ করা হলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নাছিম খান বলেন, ‘হাবিব হোটেলের প্রতি আগ্রহ না থাকায় দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিতে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছি।’


জানা গেছে, রেস্তোরাঁটি ইজারার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর কাঙ্ক্ষিত চাহিদা দিয়েছিল ৪ কোটি ২১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। সেই হিসাবে হাবিব হোটেল গণপূর্তের কাঙ্ক্ষিত চাহিদার চেয়ে ১৪ ভাগ বেশি এবং ইউরো এশিয়ানো ২৮ ভাগ কম দর দিয়েছে। উল্লেখ্য, কাঙ্ক্ষিত চাহিদার চেয়ে কম দর প্রস্তাব এলে, সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের নিয়ম আছে। কিন্তু তা না করে ২৮ শতাংশ কম দর দেওয়া ইউরো এশিয়ানোর কাছে রেস্তোরাঁটি ইজারা দেওয়ার আয়োজন চলছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব মো. জামিলুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জটিল, তাই কিছু বলতে চাই না।’ কমিটির আরেক সদস্য নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মণ্ডলও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ইউরো এশিয়ানো সরকারদলীয় এক নেতার প্রতিষ্ঠান। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক ব্যক্তি প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এ বিষয়ে তদবির করেন। 


শেয়ার করুন