২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৮:২৭:৫৬ অপরাহ্ন
বাণিজ্যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৪
বাণিজ্যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে

পদ্মায় চালু হতে যাচ্ছে নৌরুট 


নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় রাজশাহীর পদ্মা তীরবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। উদ্বোধনের পর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদীবন্দরের মর্যাদা পাবে। এর মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে।


নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর একান্ত সচিব (পিএস) মোহা. আমিনুর রহমান বলেন, রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি শেষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফাসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু হলে এই পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বাংলাদেশে আসবে। অন্যদিকে এই পথে বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাতপণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। তবে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানিতে সময় ও খরচ বহুলাংশে কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা


আশা করছেন, এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর। রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্যসংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হবে।


বাংলাদেশের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নকাজের জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ পাকুড় ব্র্যান্ডের পাথর ও খনিজ বালুর প্রয়োজন হয়। বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও যমুনা রেলসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় ব্র্যান্ডের পাথর। তবে সড়কপথে এসব পণ্য আমদানিতে সময় ও খরচ বেশি পড়ে। নৌপথে এসব পণ্য আমদানি করলে পরিবহন খরচ কমবে।


উল্লেখ্য, পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জে সারাবছর নৌ চলাচল উপযোগী পানি থাকে। ভারতের ময়া বন্দরটিও একইরকম। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার মধ্যখানে কিছু পথে নাব্যতা কমে যায়। তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পদ্মায় ড্রেজিং করে নৌপথটি সারাবছর সচল রাখা হবে। বর্ষা মৌসুমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ময়া থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আসতে পণ্যবাহী নৌযান মাত্র এক ঘণ্টায় আসতে পারবে।


প্রস্তাবিত সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, সুলতানগঞ্জ-ময়া একটি লাভজনক ও চমৎকার নৌরুট হতে পারে। দুই পাড়েই অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। সুলতানগঞ্জ বন্দর চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।


সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌরুট চালুর বিষয়ে গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, এই পথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হলে উভয় দেশই বিপুলভাবে লাভবান হবে।


ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নৌপ্রটোকলের আওতায় ২০২০ সালের অক্টোবরে সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি চালুর কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার।


স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া, গোদাগাড়ী ও ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বিপুল বাণিজ্য চালু ছিল। বাংলাদেশ থেকে এই পথে ভারতে বিপুল পরিমাণ পাট রপ্তানি হতো। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। এই মাছ এই নৌপথে ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব। ভারত থেকে কয়লা, সিমেন্ট তৈরির উপকরণ ফ্লাই অ্যাশ, ক্লিংকার আমদানিও সম্ভব। কারণ ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের পাকুড় থেকে মুর্শিদাবাদের ময়া বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৫৫ কিলোমিটার। জানা গেছে, ভারতের ময়া নৌঘাট থেকে বর্ষাকালে প্রতিটি নৌযানে ৩০০ টন পর্যন্ত পণ্যপরিবহন করা যাবে।


শেয়ার করুন