০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৩২:৩৭ অপরাহ্ন
গাড়িতে আগুন ঠেকানো যাচ্ছে না
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১১-২০২৩
গাড়িতে আগুন ঠেকানো যাচ্ছে না

সাদাপোশাকে নজরদারি, মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট (তল্লাশিচৌকি), যাত্রীদের সচেতন করা, এমনকি পুরস্কার ঘোষণা করেও যানবাহনে আগুন দেওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। কখনো ভোরে, কখনো রাতে আবার কখনো দিনদুপুরে সবার সামনেই দুর্বৃত্তরা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। র‍্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, যানবাহনে আগুনের ঘটনা শুরুর দিকের তুলনায় অনেকটা কমেছে। তাঁদের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতেনাতে ধরার পর থেকেই কমতে শুরু করেছে আগুন লাগানোর ঘটনা। 


তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছা করেই কোনো এক পক্ষকে আগুন লাগানোর সুযোগ করে দিচ্ছে, যাতে বিএনপির ওপর দায় চাপানো যায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিএনপিসহ বিরোধীদের ডাকা টানা হরতাল-অবরোধে ১৮৫ যানবাহন পুড়েছে। সংস্থাটি বলছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনায় আগুন লাগানো হয়।


যানবাহনের মধ্যে আছে বাস ১১৮টি, ট্রাক ২৬টি, কাভার্ড ভ্যান ১৩টি, মোটর সাইকেল ৮টি, প্রাইভেট কার ২টি, মাইক্রোবাস ৩টি, পিকআপ ৩টি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৩টি, ট্রেন ২টি, নছিমন ১টি, লেগুনা ৩টি, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি ১টি, পুলিশের গাড়ি ১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলমান অবরোধে রাজধানীতে আগের মতোই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন সন্ধ্যা থেকে আরও বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বাসে বাসে সাদাপোশাকের পুলিশ সদস্যরা বসে থাকছেন। যাত্রীদের ছবি ওঠানো হচ্ছে। বাসগুলোতেও ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এসবের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা চোরাগোপ্তা হামলা করে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।


পুলিশ জানিয়েছে, এই সময়ে আগুন লাগানোর ঘটনাস্থল থেকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে চলমান হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক হাজার ব্যক্তিকে।


ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, যারা বাসে আগুন দিচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নাশকতার পেছনে আরও যারা জড়িত, তাদের নামও পাওয়া যাচ্ছে। এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও কীভাবে যানবাহনে আগুন লাগানো হচ্ছে, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগুনের ঘটনায় সম্প্রতি যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা গেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্দেশে যানবাহনগুলোতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এই কাজের জন্য বিএনপি থেকে নেতা-কর্মীদের টাকা দিচ্ছে।


গত বুধবার ভোরে রাজধানীর পল্লবীতে ওয়ালটনের গলিতে পার্কিং অবস্থায় বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগানোর ঘটনায় মারুফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি নেতা সাজ্জাদ কাউন্সিলর ও জসিমের নির্দেশে এবং তাঁদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ও প্ররোচনায় কেরোসিন ঢেলে ওই বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ জন্য মারুফকে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।


র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাতে কালভার্ট রোড এলাকা থেকে মুগদা যুবদল নেতা মো. বাবুল মিয়া ও মো. মাসুদ শেখকে আটক করা হয়। তাঁরা বড় পদের আশায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক মজুত করেছিলেন। 


তবে র‍্যাব ও পুলিশের এসব কথা মানতে নারাজ বিএনপির নেতারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বানচাল করার জন্য এই সরকার নিজেরা আগুন-সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াওয়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ যারা ধরা পড়ছে, তারা ক্ষমতাসীনদের লোক। জনগণের সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করতে সারা দেশে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা এ রকম বোমা বানিয়ে বোমা হামলা করছে এবং অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছে।’


শেয়ার করুন