দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একসময় বেশ কয়েকটি চরমপন্থি দল লুটতরাজ, জিম্মি, অপহরণ, খুনসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে এসব অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার খুন সংগঠিত হয় চরমপন্থিদের হাতে। সময়ের পরিক্রমায় চরমপন্থিদের সৃষ্ট ত্রাসের রাজত্ব র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানে ভেঙে পড়ে। চরমপন্থিদের অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান, অনেকে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অপরাধ জগৎ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া এসব চরমপন্থির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২১ মে র্যাবের তত্ত্বাবধানে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং রাজবাড়ী জেলার ৩১৪ জন চরমপন্থি ২ শতাধিক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে উদ্যোগী হয় র্যাব। ‘উদয়ের পথে’ নামক পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এবার পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। আগামী ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে (র্যাব-১২) গিয়ে তাদের হাতে চেক হস্তান্তর করবেন র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ করা চরমপন্থিদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন র্যাবের ডিজি অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সদয় বিবেচনা করে তার ‘ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা অনুদান মঞ্জুর করেন। আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থিদের স্বাভাবিক পেশায় জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি এবং যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেননি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় উৎসাহিত করতেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই আর্থিক সহায়তা মঞ্জুর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
র্যাব সদর দপ্তর জানায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অপরাধ নির্মূলে চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ এবং আর্থিক, মানবিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে একটি
যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে র্যাব। আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ ব্যতিত অন্যান্য মামলা যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।