২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৪:৫০:৫৫ পূর্বাহ্ন
রিজার্ভে আসবে স্বস্তি ॥ নতুন বছরে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
রিজার্ভে আসবে স্বস্তি ॥ নতুন বছরে

ডলার সংকট মেটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ডলারের দাম চলতি মাসে ৭৫ পয়সা কমানো হয়েছে। চলতি মাসে আরও ২৫ পয়সা কমানো হবে ডলারের দাম। ফলে আরও বেশি শক্তিশালী হবে টাকা। চলতি মাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে রিজার্ভে বাজেট-সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যুক্ত হবে। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদিত হওয়ার কথা রয়েছে। ঋণ অনুমোদন হলে আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ডলার রিজার্ভে যুক্ত হবে।


এসব উদ্যোগের ফলে নতুন বছরেও রিজার্ভে থাকবে স্বস্তি। এই রিজার্ভ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময়ে রিজার্ভ অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত থাকবে। এ ছাড়া চলতি মাসে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় আগের যে কোনো মাসের তুলনায় বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হুন্ডি বন্ধ করে রেমিটেন্স বৈধ পথে নিয়ে আসা ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য নিতে হবে বহুমুখী পদক্ষেপ। বিদেশে পড়ে থাকা রপ্তানি আয় এবং পাইপলাইনে আটকে থাকা অর্থ দ্রুত দেশে আনতে হবে। 

জানা গেছে, করোনা অতিমারি-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। এ সবের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর ডলার চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ কারণে ২০২১ সালের আগস্টে ৮৪ টাকায় থাকা ডলার এখন ব্যবসায়ীদের ১২২ থেকে ১২৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একইসঙ্গে ওই সময় ৪৮ বিলিয়নের ওপরে ওঠা রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।


বাজার সামলাতে ২০২১ সালের আগস্টের পর রিজার্ভ থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত এক বছরের বেশি সময় ডলার সংকট মেটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম কমাতে বাধ্য করেছে ব্যাংকগুলোকে। ফলে চলতি মাসে ৭৫ পয়সা কমানো হয়েছে ডলারের কেনাবেচার দাম। চলতি মাসে ডলারের দাম আরও ২৫ পয়সা কমানোর চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে নীতি সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নীতি সুদহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।


এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের সুদ ও ঋণের সুদহার আরও বাড়বে। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন। এর ফলে যাদের কাছে ডলার সংরক্ষিত আছে, তাদের অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হয়। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ডলারের বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদার ও ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রিজার্ভের পতন ঠেকানোর উপায় একটাই তা হলো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে হবে।


এ জন্য ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘হুন্ডি বন্ধ করে রেমিটেন্স বৈধ পথে নিয়ে আসা ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য নিতে হবে বহুমুখী পদক্ষেপ। বিদেশে পড়ে থাকা রপ্তানি আয় এবং পাইপলাইনে আটকে থাকা অর্থ দ্রুত দেশে আনতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। নিট রিজার্ভও কমতে কমতে ১৯ বিলিয়ন ডলারের প্রান্ত সীমায় এসে দাঁড়িয়েছে।  নিট রিজার্ভ আর ১৩ কোটি ডলার কমলেই তা ১৮ বিলিয়নের (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ঘরে নেমে আসবে। যদিও প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করা যায়, এর সুফল মিলবে। এ ছাড়া চলতি ডিসেম্বর মাসে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশী ঋণ ও বাজেট সহায়তা আসবে। এর ফলে চলতি মাসে রিজার্ভ কমবে না, বরং বাড়বে।’


তিনি বলেন, জানা গেছে, চলতি মাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে রিজার্ভে বাজেট-সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যুক্ত হবে। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদিত হওয়ার কথা রয়েছে। পর্ষদের অনুমোদন হওয়ার পর আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ডলার রিজার্ভে যুক্ত হবে। 

ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরানোর উদ্যোগ ॥ রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবে জমার ওপর এখন থেকে ৭ শতাংশের বেশি সুদ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে খোলা এ ধরনের হিসাব থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো, একাধিক কার্ড ইস্যুসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা ব্যাংকগুলোকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্লেখ্য, এখন অনেকেই ডলার কিনে ধরে রাখায় বাজারে নগদ ডলারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে আনতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কেউ যেকোনো প্রয়োজনে দেশের বাইরে গিয়ে ফেরার পর আরএফসিডি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত জমা রাখতে পারেন। কেউ হয়তো যাওয়ার সময় ৫০০ ডলার সঙ্গে করে নিয়েছিলেন। ফেরার পর ১০ হাজার ডলার দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুললেও কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না। মূলত মানুষের হাতে থাকা ডলার ব্যাংকে আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, এই হিসাবে জমার বিপরীতে দুটি সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যু করা যাবে। সন্তান বা ভাইবোনসহ ব্যাংকগ্রাহকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি সেই কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে শিক্ষার খরচ পাঠানো যাবে। আবার নিজের ওপর নির্ভরশীল তথা স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান, ভাইবোন, পিতামাতার চিকিৎসার খরচও এখান থেকে বহন করা যাবে।


শেয়ার করুন