২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৩:১৭ অপরাহ্ন
নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চলের চোরাকারবারিরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১২-২০২৩
নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চলের চোরাকারবারিরা

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাকারবারিরা। সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ঢুকছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মূলত রাজশাহীকে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রানজিট হিসেবে। অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালানে সক্রিয় আছে ২৫টি সিন্ডিকেট। আর এসবের বেশিরভাগ চালানেই আসছে ভারতের বিহার থেকে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢোকা অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রধান রুট হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিস্ফোরক আসছে। চিহ্নিত এসব চক্রের সদস্যদের ওপর কঠোর নজরদারি করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা ও নওগাঁর পোরশা, ধামরইহাট ও সাপাহার সীমান্তে দিয়ে অস্ত্র আসে। সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানের অন্যতম রুট চাঁপাইয়ের শিবগঞ্জ। ভারত থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দেশে ঢুকছে এসব আগ্নেয়াস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন সবজি, ফল ও পণ্যবাহী ট্রাকেও অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে। মাঝে মাঝে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ে বহনকারীরা। তাদের বেশির ভাগই কিশোর ও যুবক। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন রাঘববোয়ালরা।


সূত্র আরও জানায়, ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালানকারীরা পশ্চিমবঙ্গের মালদার সীমান্তবর্তী কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, খোজাপুর, মোজামপুর এবং মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করে। বিহারের মুঙ্গের থেকে চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা। মুঙ্গেরে ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা আছে। এসব অস্ত্র প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে মজুত হয়। সেখান থেকে সীমান্তপথে বাংলাদেশে আসে সিন্ডিকেটের হাতে। অবৈধ অস্ত্র বহন ও পাচারের জন্য রয়েছে আরেকটি সিন্ডিকেট। এরা বাংলাদেশে অস্ত্রের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর শর্তে দরদাম ঠিক করে।


অস্ত্র চালানে জড়িত গ্রেফতাররা স্বীকার করেছেন, জাপান বা ইউএসএ লেখা থাকলে সেসব অস্ত্র দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। তবে অস্ত্রের গায়ে জাপান ও ইউএসএ লেখা থাকলেও এগুলো বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি। চাহিদা অনুযায়ী বিহারের মুঙ্গেরে বিশ্বের যেকোনো দেশের বহনযোগ্য আগ্নেয়াস্ত্রের কপি তৈরি করা হয়। এমনকি একে-৪৭ রাইফেলও মুঙ্গেরের কারিগররা তৈরি করে দিতে পারেন।


৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার চরাঞ্চল সীমান্তগুলো বেশ দুর্গম। এ কারণে অনেক সময় দ্রুত অভিযান চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপরও বিজিবি এ পয়েন্টগুলোতে নজরদারি ও টহল অব্যাহত রেখেছে। বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ বলেন, ‘অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যেকোনো অবৈধ জিনিস যাতে সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবি সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে সব সময় সতর্ক আছে। শুধু নির্বাচনের সময় বলে নয়, সীমান্তে বিজিবি অবস্থান সবসময়ই কঠোর।’


রাজশাহীর র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার লক্ষ্যে অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেটগুলো দেশি-বিদেশি অস্ত্র মজুদ করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তবে অস্ত্র কারবারিদের বিষয়ে সজাগ আছে র‌্যাব। তাদের ধরতে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযানও চালিয়েছি।’ জানা গেছে, র‌্যাবের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে সীমান্তে ৫৯ বিজিবির সদস্যরা ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছেন।


শেয়ার করুন