২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
এক রাজ্য দখল নিতে যুদ্ধ করছেন দুই বাদশা
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১২-২০২৩
এক রাজ্য দখল নিতে যুদ্ধ করছেন দুই বাদশা

দ্বাদশ নির্বাচনে আলোচিত একটি আসন হলো রাজশাহী-২ সদর আসন। স্বাধীনতার পর এই আসনটিতে এইএইচএম কামারুজ্জামান হেনা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো এমপি নির্বাচিত হন নি। স্বাধীনতার পর থেকেই এই আসনটি বিএনপির দখলে ছিল দীর্ঘদিন। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগ তুলে দেয় শরীক দলের হাতে। এরপর আওয়ামী লীগের অধিনে আরো দুটি নির্বাচন হলেও আসনটি আওয়ামীগ পায়নি।


২০০৮সাল থেকে ২০১৮ সাল ও আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনেও এ আসনটি শরীকের কাছে দেয়া হয়েছিল। যদিও দ্বাদশ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েও ভাগবাটোয়ার জায়গা থেকে শরীককে ছেড়ে দিতে হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ রাজশাহীর মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে এবার সদর আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে যাবে এমনটাই চিন্তা করে মাঠে নেমেছে রাজশাহীর আওয়ামী লীগ।


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মাদ আলী কামালকে। কিন্তু ভাগবাটোয়ারা প্যাচে পড়ে শরীক দল ওয়ার্কার্সপার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে দেয়া হয়েছে। তিনি চতুর্থবারের মত নিজ প্রতীক ছেড়ে নৌকায় উঠেছেন। কিন্তু এবার নৌকা থেকে পিছলে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে এমপি বাদশার।


রাজশাহী সদর আসনে নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা ছাড়াও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা (কাঁচি প্রতীক)।


জানা গেছে, টানা ১৫ বছর রাজশাহী সদর-২ আসনে এমপি আছেন বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসন বাদশা। বিগত তিনবারই তিনি নিজ দলের হাতুড়ি প্রতীক ছেড়ে নৌকায় উঠে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু নৌকায় উঠে তিনি এমপি হলেও গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সাথে তার কোনো যোগসূত্র ছিল না। দীর্ঘ সময়জুড়ে এমপি বাদশার সাথে আওয়ামী লীগের মতপার্থক্য চলে এসেছে। যার কারণে এবার নৌকা পাওয়া নিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তায় ছিলেন বাদশা। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নৌকা পেলেও নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।


নৌকা প্রতীক নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মাঠে নামেন। মাঠে নেমেই তিনি চরম কর্মী সংকটের মধ্যে পড়েন। কারণে এবার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তার প্রচার-প্রচারণা যাচ্ছেন না। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে তুলতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে কাজ করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে জয়ী করতে এরই মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগি সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধাসহ শ্রেণি পেশার মানুষ কাজ করছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।


আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, সদর আসনে বাদশার নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংক নাই। জোটের ভোটেই তিনি তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আর তাকে সুযোগ দেয়া হবে না। যার কারণে প্রচারণায় নেমে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এমপি বাদশা।


আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি বাদশা তিনবার এমপি হয়ে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো উপকারে আসেননি। খোদ রাসিক মেয়রকে নিয়েও তিনি বিরুপ মন্তব্য করেছেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি ফজলে হোসেন বাদশা গত ১৫ বছরে মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে বৈরীতা সৃষ্টি করে করেছেন, এবার তার প্রতিফলন দেখানো হবে। এবার কোনোভাবেই বাদশাকে ছাড় দেয়া হবে না। এজন্য নৌকার প্রার্থী বাদশার পক্ষ না নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশার হয়ে মাঠে নেমেছেন।


খোদ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামলা, মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপি বাদশার সাথে না যাওয়ায় তার প্রচারণায় ১৫ থেকে ২০জনের বেশি কর্মী সমর্থক দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সাধারণ ভোটাররাও মনে করছেন ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা পেলেও এবার তার ভরাডুবি কেউ ঠেকাতে পারবে না।


রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘রাজশাহী সদর আসনে দলের নেতাকর্মীরা আর অন্য কাউকে চায় না। গত ১৫ বছরে রাজশাহী সদর আসনে নৌকা প্রতীক অন্য দলের হাতে ]দেয়ায় আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা সেই ক্ষতি আর হতে দেবো না। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশার হয়ে কাজ করছি। তাকেই নির্বাচিত করতে চাই।


রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, এবার আমরা আশা করেছিলাম দলের নেতাদের মধ্যেই নৌকা থাকবে। দলের মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালকে প্রথমে নৌকা প্রতীক দেয়া হলেও পরবর্তিতে সেটি বাতিল করে এমপি বাদশার হাতে নৌকা তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি আমাদের কখনো মূল্যায়ন করেননি, সেহেতু তাঁর হয়ে কাজ করার প্রশ্নই আসে না।’


শেয়ার করুন