বিদায় নিতে যাচ্ছে ঘটনাবহুল ২০২৩ সাল। এই ১২ মাসে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্য বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলো বেশ কিছু বিপত্তিতে পড়েছে, যা পশ্চিমাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর। তাতে এখন পর্যন্ত কেউই বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু এসব বিপত্তি যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যময় ক্ষমতাকাঠামোর ভারসাম্যে চিড় ধরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বেশ কয়েকটি দিক থেকেই পশ্চিমা স্বার্থের বিপক্ষে বাতাস বইতে শুরু করেছে। এর মধ্যে প্রথমেই আসে ইউক্রেনের বিষয়টি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘সামরিক অভিযানের’ নামে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। কৃষ্ণসাগরে সম্প্রতি কিছু সাফল্য পেলেও ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধ ভালো যাচ্ছে না। তার মানে এটা ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য সুখবর নয়, যারা ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সব ধরনের সমর্থন দিয়েছে এবং দেশটির অর্থনীতি সচল রাখতে কয়েক শ বিলিয়ন ডলারের অর্থসহায়তার জোগান দিয়েছে। তারা মনে করেছিল তাদের দেওয়া অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এবং নিবিড় প্রশিক্ষণ ইউক্রেনকে বাড়তি সুবিধা দেবে। বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা।
এদিকে পশ্চিমাদের জন্য আরেকটা অস্বস্তিকর বিষয় চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা চালানোর পরপরই ইসরায়েল গাজায় সব দিক থেকে ভয়াবহ হামলা চালায় এবং এতে প্রতিদিনই ফিলিস্তিনি মারা পড়ছে। এটাও যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে পশ্চিমাদের জন্য খারাপ। এটা ন্যাটোর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউক্রেন থেকে বৈশ্বিক মনোযোগ অন্যত্র সরিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তাও কিয়েভ থেকে ইসরায়েলের দিকে প্রবাহিত করেছে।
আবার এ যুদ্ধের কারণে বেশির ভাগ মানুষ বিশেষ করে মুসলিমদের চোখে বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভিলেন হিসেবে হাজির হয়েছে। কারণ গাজা ইস্যুতে জাতিসংঘে আনা প্রস্তাবে তারা ইসরায়েলকেই সুরক্ষা দিয়েছে।
অন্যদিকে ইরান নিয়েও পশ্চিমাদের অস্বস্তি চরমে। গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কারণে ইরান পশ্চিমাদের সন্দেহের তালিকায়, যা তারা বরাবরই অস্বীকার করে। এ ছাড়া পশ্চিমা জোরালো প্রচেষ্টা ও নজরদারি বাড়ানো সত্ত্বেও তারা ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং গাজায় বিভিন্ন প্রক্সি গোষ্ঠীকে অর্থসহায়তা, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
পশ্চিমাদের অস্বস্তি আছে পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল নিয়েও। এই অঞ্চলের দেশগুলো একের পর এক সেনা অভ্যুত্থানে জর্জরিত। ফলে সেখান থেকে ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে প্রত্যাহার করতে দেখা গেছে, যারা ওই অঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে দমনে সাহায্য করছিল।
চীন নিয়েও অস্বস্তি কাটেনি পশ্চিমাদের। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে সফল শীর্ষ সম্মেলনে এ বছর দুই দেশের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমন হয়েছে। তবে চীন দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দাবির বিষয়ে পিছিয়ে আসার কোনো লক্ষণ দেখায়নি। কিংবা তাইওয়ানের দাবি থেকেও সরে আসেনি। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া নিয়ে তো অস্বস্তি আছেই।