২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:০৫:২৬ অপরাহ্ন
কেন্দ্রে ভোটার আনায় জোর প্রার্থীদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৪
কেন্দ্রে ভোটার আনায় জোর প্রার্থীদের

দিনক্ষণ মিলিয়ে দেখলে আর মাত্র তিন দিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিসহ তাদের বলয়ের রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। ভোটের জমজমাট প্রচার চলছে শেষ পর্যায়ে। প্রচারের মধ্যেই কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়টি চলছে নানা ধরনের উদ্যোগ। বিরোধীদের বাধা উপেক্ষা করে ভোটার যাতে কেন্দ্রে আসেন সে বিষয়টি নিশ্চিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। এজন্য নানা ধরনের কমিটি এবং এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট গ্রুপ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।


বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বলছেন, নির্বাচনি উৎসব মানেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি। এটি যদি আশানুরূপ না হয়-তাহলে এই উৎসবে ভাটা পড়বে। তাই ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে ভোটার আনাতেই জোর দিচ্ছেন ভোটে অংশগ্রহণকারীরা। অন্যদিকে বিএনপিসহ ভোট বর্জনকারী দলগুলো চেষ্টা করছে যাতে মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে না আসে। উভয় পক্ষই ভোটারের কাছে গিয়ে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরছেন। এ অবস্থায় অনেক ভোটার বিভ্রান্তিতে পড়েছে। তারা ভোট দেবেন কি না তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই মড়িয়া নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধনে। এ অবস্থায় ভোটার কী করবেন তা দেখা যাবে ৭ জানুয়ারি। আপাতত সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানালেন বিশ্লেষকরা।


জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, দেশের মানুষ একদিকে আওয়ামী লীগ। আরেকদিকে বিএনপি-এই দুই দলকে বোঝে। আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা নির্বাচন করছে। বিএনপিসহ তাদের শরিকরা এই নির্বাচনে নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাই এ রকম একতরফা নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। কারণ ফলাফল কী হবে, তা তারা জানেন।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা আশাবাদী। ঢাকাবাসীসহ সারা দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে।


তবে ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, দেশের মানুষ মনে করে এটি একটি প্রহসনের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা ভাগাভাগির নির্বাচন করছে। জনগণ এই নির্বাচন ইতোমধ্যে বর্জন করেছে। ভোটের দিনও তারা ভোট বর্জন করবে।


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১৯৪৮ জন প্রার্থী অপেক্ষায় আছেন ৭ জানুয়ারির মাহেন্দ্রক্ষণের। দিনশেষে কে হাসবেন শেষ হাসি-জানা যাবে ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এর দুদিন আগে অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টার পর থেকে কোনো ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।


নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসাবে ৫ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন।


এবারের নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রার্থী আছে ২৮টি দলের। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছে ২৬৩ আসনে। দলটির আরও ২৬৯ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আছেন; যারা ইতোমধ্যে আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোটের মাঠে পরিচিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ জন বর্তমান সংসদ-সদস্যও রয়েছেন, যারা এবার দলের মনোনয়ন পাননি। কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের বাইরেও কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মোট স্বতন্ত্র প্রার্থী সাড়ে চারশর কাছাকাছি। অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাই বা ইসির আপিলে যারা প্রার্থিতা হারিয়েছেন, তাদের অনেকেই উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠে নেমেছেন। জাতীয় পার্টি ২৯৬টি আসনে প্রার্থী দিলে তাদের ৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেননি। আর শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরও ২৬ জন। তবে অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা তাদের সীমিত শক্তি এবং সামর্থ্য নিয়ে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে আছেন।


এর আগে নির্বাচনগুলোর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে মোট ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের হার ওঠানামা করেছে শুরু থেকেই। অতীতেও একাধিকবার দেখা যায় প্রধান বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের সংস্কৃতি। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই সময় মহাজোটের ব্যানারে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ভোটের হার ছিল মাত্র ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকার গঠন করে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল মাত্র চার দিন। বিগত ১১টি নির্বাচনে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নানান ধরনের পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য এসেছে। প্রতিটি নির্বাচনে ভোটার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের জামানতও বেড়েছে। শুরুতে এক হাজার টাকা জামানত দিয়ে শুরু হয়ে বর্তমানে প্রার্থীদের জামানত দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। বিভিন্ন সময়ে বাড়ানো হয়েছে সংরক্ষিত নারী আসনও। প্রধান দলগুলোর ভোট বর্জনের সংস্কৃতিও নতুন নয়। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা যাতে কেন্দ্র আসেন, ভোট দেন-এমন উদ্যোগ নিয়েছেন প্রার্থীরা। এজন্য তারা নানাভাবে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। নিয়েছেন নানা কৌশল।


শেয়ার করুন