০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫১:৩৫ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী-৬ আসনে ১২ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০১-২০২৪
রাজশাহী-৬ আসনে ১২ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের ৩৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে চারঘাটের ১৬ ও বাঘার ১৮ জন রয়েছেন। কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক গত বৃহস্পতিবার তাদের নিয়োগ বাতিল করতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ১২ জনের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। অন্যদের বিষয়ে তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ।


জানা গেছে, চারঘাটের শলুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন, রাওথা কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন, চারঘাট মহিলা কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শরিফুল ইসলাম প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন। অথচ দু’দিন আগেও তারা নৌকা প্রতীকের প্রচারে অংশ নিয়েছেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। একই উপজেলার নন্দনগাছী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াহেদুল ইসলাম ও বাঘার মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে ওয়াহেদুল চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর আবুল কালাম ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী হিসেবে প্রচারে ছিলেন।


এদিকে সরদহ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান ফেসবুকে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’। এ ছয়জনসহ চারঘাট ও বাঘার ৩৪ জন শিক্ষকের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহেনুল হক।


উপজেলাভিত্তিক পৃথক দুটি অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ৩৪ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন কিংবা ছিলেন। এমনকি এবার নৌকা প্রতীকের প্রচারে অংশ নিয়েছেন।


রাহেনুল হক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি সুবিধাভোগী কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কা আছে। তিনি তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।


চারঘাটের ৬২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মধ্যে অভিযোগে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করেছেন রাহেনুল হক। তারা সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ১৬ জনই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে ছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর। বাঘার ৬৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মধ্যে ১৮ জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে তাদেরও অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।


নিজেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক স্বীকার করে অভিযোগে নাম থাকা বাঘার মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিন দিন আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর আগে নৌকার প্রচারে ছিলেন। প্রশিক্ষণে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এরপর থেকে তিনি আর প্রচারে যাননি।


রাওথা কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেনও নিজেকে নৌকার সমর্থক বলে স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, শিক্ষকরা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না- এ ধরনের আচরণবিধির কথা জানা ছিল না তাঁর। এজন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হওয়ার আগে প্রচারে ছিলেন। এমন অভিযোগ হতে পারে। এজন্য আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।


তবে কেউ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাননি বলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চারঘাটের ইউএনও সাইদা খানম নিশ্চিত করেছেন। সাইদা খানম বলেন, অভিযোগে নাম আসা ১৬ জন শিক্ষক প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে ১২ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। অন্য চারজনকে রিজার্ভে রাখা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।


বাঘার ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। যেসব প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের নিয়োগ বাতিল হবে।


এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, চারঘাট ও বাঘার প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।


শেয়ার করুন