স্বামী ও নিজের পদের প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অপকর্মে জড়িয়েছেন। এলাকায় ক্যাসিনো সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। নিয়োগ, বাণিজ্য, তদবির করে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। বলছিলাম সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা ইসলামের কথা।
রোববার মোনালিসাকে রাজধানীর ইস্কাটন থেকে আটক করা হয়। পরে সোমবার দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়। একটি মামলায় আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুরও করেন।
এদিকে মোনালিসার গ্রেফতারের খবরে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টি। গ্রেফতারের খবরে উল্লাসে মেতে উঠেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেহেরপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন যতটা না ক্ষমতাধর ছিলেন মোনালিসা ইসলাম ছিলেন তার চাইতে বেশি ক্ষমতাধর। তিনি ঢাকা থেকে মেহেরপুরে আসলেই সেখানে ভিড় লেগে যেত। বিভিন্ন জেলার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা ছাড়াও তদবিরকারীরা ভিড় করতেন। তিনি যে কদিন মেহেরপুরে থাকতেন ওই কয়দিন স্থানীয় আবাসিক হোটেলগুলো ফাঁকা থাকতো না।
স্থানীয়দের দাবি, অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন মোনালিসা। জুয়া দিয়ে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও প্রশাসন জুয়া বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যা স্বীকার করেছেন সাবেক মন্ত্রী ফরহাদের ছোট ভাই জেলা যুবলীগের আহবায়ক সরফরাজ হোসেন মৃদুল। তার বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
সেখানে মৃদুল বলেন, ‘মোনালিসা ভাবি অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন। পুলিশকে ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে মাসে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা কামাতেন তিনি। ক্ষমতা হারানোর পর ৫০ কোটি টাকা দিয়েছেন মামলা থেকে রক্ষা পেতে। তাই তার নামে কোনো মামলা হয়নি। ভাবির কারণেই আমার ভাই নষ্ট হয়েছে।’
মৃদুল আরও বলেন, ‘ফরহাদ হোসেন নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য ও দুর্নীতির মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় তার বাড়ি আছে। ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে। সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন মন্ত্রী ও তার স্ত্রী। টাকা ছাড়া টেন্ডার, নিয়োগ ও বদলি কিছুই হতো না। ভাইয়ের দুর্নীতির কারণেই আজ আমরা সবাই ঘরছাড়া। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলার আসামি হয়েছি।’