২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৫১:৫২ অপরাহ্ন
প্রাধান্য পাবে আর্থ-কূটনীতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৪
প্রাধান্য পাবে আর্থ-কূটনীতি

 মহামারি আর যুদ্ধের ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করাই টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থ-কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্য থেকেই একাধারে অর্থনীতিতে দক্ষ একজন পেশাদার কূটনীতিকের হাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন সরকারপ্রধান। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আর্থ-কূটনীতির কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের সব দেশের সরকারই এখন আর্থ-কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশে দেশে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি এখন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। আমাদের দেশের সরকারও সেটা যথার্থভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেজন্যই আর্থ-কূটনীতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর এ লক্ষ্য অর্জনে একজন যোগ্য ব্যক্তির হাতেই পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষিত হলেও একজন কূটনৈতিক হিসেবে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোপূর্বে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। পাশ্চাত্যের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতি বিষয়ে তার ভালো দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে তিনি আরো বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জানতে চাইলে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার নতুন করে পররাষ্ট্র নীতিসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে ঢেলে সাজাতে চায়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন একেবারেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আর অর্থসংক্রান্ত বা বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, অর্থনীতির বিষয়গুলোকে সম্মুখভাবে উপলব্ধি করা, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা থাকা এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করা- এই জায়গা থেকে বিবেচনা করলে বর্তমান অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট যোগ্য। কারণ তিনি বিগত সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। সংসদীয় কমিটির আর্থিক বিভাগীয় কমিটিগুলোরও সদস্য ছিলেন তিনি। সুতরাং তিনি একজন কূটনৈতিক হলেও অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে নীতিসংক্রান্ত জায়গাগুলোতে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে যদি দক্ষতা দেখাতে পারেন তবে সেটাই হবে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।

কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০২১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলার সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা বর্তমান পর্যায়ে আসা পর্যন্ত বিদায়ী মন্ত্রী সামাল দিতে পারেননি। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত পশ্চিমাদের সঙ্গে এক ধরনের ঠাণ্ডা লড়াই চলছে সরকারের। বিশেষ করে পোশাক খাত নিয়ে ভীতি রয়েছে। কারণ দেশের অর্থনীতির আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি। আর প্রায় ৮১ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে পোশাক খাতের মাধ্যমে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থমন্ত্রী যাকে করা হয়েছে কূটনীতির ক্ষেত্রে তার সুনাম আছে, সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো বুঝে কাজ করলে ভালো কাজের সুযোগ আছে।

তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন মাহমুদ আলী। এই সময়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল বিনিময় তার সময়েই হয়। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়াদে মন্ত্রিত্ব না পেলেও অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদ আলী।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন। সুতরাং তার অভিজ্ঞতা ভালো আছে। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটিতে যে বা যারা আছেন- তাদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা একমাত্র তারই আছে বলে আমি মনে করি। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। তবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় লিডারশিপের যে ভূমিকা নিয়ে বিগত দিনে প্রশ্ন ছিল- সেটা হয়তো তার সময়ে থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, অর্থমন্ত্রীর কূটনীতির ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল পদচারণা ছিল। এছাড়া তিনি অর্থনীতির ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন অনেক দিন। সুতরাং অর্থনৈতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে তিনি ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। তিনি বলেন, আগের মন্ত্রী নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং তার অদক্ষতার কারণে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেয়া যায়নি। আশা করি নতুন অর্থমন্ত্রী আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, রিজার্ভ সংকট, ডলারের দামের উর্ধ্বগতি, রেমিট্যান্স হ্রাস পাচ্ছে, পুঁজি পাচারের মতো বিষয়গুলো সামাল দিতে হলে কঠোর হাতে পদক্ষেপ নেয়ার সদিচ্ছা রাখতে হবে। তাবেই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হবে।


শেয়ার করুন