২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২২:২২ অপরাহ্ন
জমানো অর্থ ফেরত পেতে ঘুস দিতে হয় মিয়ানমার সেনাদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২২
জমানো অর্থ ফেরত পেতে ঘুস দিতে হয় মিয়ানমার সেনাদের

মিয়ানমারে সেনা সদস্যদের অর্থে বিশাল বাণিজ্য সাম্রাজ্য দেশটির সামরিক বাহিনী। নতুন নতুন ব্যবসা ও একের পর এক বাণিজ্যিক পরিকল্পনার মূলধন গোছাতে বড় অঙ্কের চাঁদার হার চাপিয়ে দেওয়া হয় সাধারণ সেনা ও কর্মকর্তাদের ওপর।

মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেড (এমইএইচএল) এবং অং মিন্ট মোহ মিন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এসব বিনিয়োগের প্রধান সূত্র। সেনাবাহিনীর সামান্য বেতনের সিংহভাগই দান করতে হচ্ছে বিনিয়োগের নামে।

আরও বিস্ময়কর হলো, এই বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতে চাইলেও দিতে হয় ঘুস। দেশটির সেনা সদস্যদের মাসিক বেতন ১৪৪,০০০ কিয়াত (প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা)। প্রতি বছর সর্বমোট ১৫ লাখ কিয়াট (প্রায় ৭৫ হাজার টাকা) বিনিয়োগ করা অনেকটা বাধ্যতামূলক।

কারণ, সেনা পরিচালিত ব্যবসায় বিনিয়োগ না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমইএইচএল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য। ‘বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা লাভ’ মূল মন্ত্র হলেও সেই সেবা জোটে উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তার।

প্রতি বছর মোট ১৫ লাখ কিয়াট বিনিয়োগ করতে হয় সামরিক সেনাদের। পরিবর্তে যৎসামান্য কিছু অর্থ ফের পান তারা। ১৫ লাখ কিয়াত ফেরত পেতে ঘুস দিতে হয়েছে ৫ লাখ কিয়াত।

অপরদিকে, অং মিন্ট মোহ মিন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পুরো সেনাবাহিনীকেই ভাবে খদ্দের। ক্যাপটেন থাকাকালীন জিন ইয়াত্তের মাসিক বেতন ছিল ৩৬০,০০০ কিয়াত এখান থেকে ২৫,০০০ কিয়াত দিতে হতো বিনিয়োগ হিসাবে।

এভাবে পাঁচ বছর লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিনিয়োগ করার পর মৃত্যুবরণ করলে সুদসহ অর্থ ফেরত পাবেন তারা। অন্যথায় শুধু বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাবেন বিনিয়োগকারীরা। জিন বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের অধীনস্থদের বুঝাতে হতো এই বিনিয়োগের ব্যাপারে। উত্তরে, কী লাভ শুধু এই প্রশ্নই করত সবাই।’

এসব অনাচার-অবিচার সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন জিন। এই চিত্র এখন মিয়ানমারে বেশ দৃশ্যমান। জিন এখন দেশটির ‘সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স মুভমেন্টে’র (সিডিএম) সদস্য।

সেনা শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মূল মন্ত্রে নির্ভর করে এই বিপ্লবী সংগঠনটি। মিয়ানমারের ছায়া সরকার বা ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টে’র (এনইউজি) তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার সৈন্য চাকরি ছেড়ে যোগদান করেছে সিডিএম-এ।

পরিবারের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অনেকে প্রতিবাদ করছেন লুকিয়ে। জরুরি তথ্য পাচার করে। জে থু অং বিমানবাহিনীর একজন সাবেক পাইলট।

তিনি বলেন, ‘কেউই দেশদ্রোহী হিসাবে পরিচিত হতে চায় না। প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও পরিবারের কথা চিন্তা করে পিছু হটে যান অনেকে।’

শেয়ার করুন