০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:১৩:০৪ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কাউকে জেলে নেওয়া উচিত নয়: জাতিসংঘ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০১-২০২৪
রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কাউকে জেলে নেওয়া উচিত নয়: জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, নীতিগতভাবে জাতিসংঘ বিশ্বাস করে যে, রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কাউকে জেলে নেওয়া উচিত নয়। গতকাল স্থানীয় সময় সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 


প্রেস ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, বিনা অপরাধে বা অভিযোগে আটক সব রাজনৈতিক কর্মীকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের আহ্বানের সঙ্গে একই ধরনে আহ্বান জানাবেন কি না? 


জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘নীতিগত জায়গা থেকে আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কাউকে জেলে নেওয়া উচিত নয় এবং যাদের নেওয়া হয়েছে, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত, বিশেষ করে কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে।’ 


এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারকে মানবাধিকার বিষয়ে বড় ধরনের বা ব্যাপক সংস্কারের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি এক বিবৃতিতে বলেছে, টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত, দেশে দমনমূলক প্রবণতা প্রতিহত করতে, রাজনৈতিক সংলাপ পুনরুদ্ধার ও রাজনীতিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে মানবাধিকার প্রশ্নে সংস্কার আনা। 


বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘আমরা নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার রক্ষক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা, হয়রানি ও ভয় দেখানোর খবরে উদ্বিগ্ন।’ বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, এসব বিষয় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। 


নির্বাচনের আগে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কেবল নির্বাচনী সহিংসতায় ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। অথচ এসব সহিংসতার কোনো স্বাধীন তদন্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। 


বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আস্থার অভাব প্রকাশ করে নির্বাচন বয়কট করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের চাপ দিয়েছেন এবং ভোট না দিলে সহিংসতা ও তাদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। 


বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছি। কথিত অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ, দ্রুত ও স্বাধীন তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছি।’ তাঁরা আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, আইনের শাসনের বিপজ্জনক অবক্ষয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হওয়ায় আমরা শঙ্কিত। এটি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করছে এবং এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিপন্ন করতে পারে।’ 


ইউএনএইচআরসির বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) সরকারকে নতুন কর্মসূচিতে মানবাধিকারের সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে এবং মৌলিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অবাধ ও নিরাপদ প্রয়োগে একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য অনুরোধ করছি।’ 


তাঁরা আরও বলেন, ‘এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আশ্বস্ত করবে এবং বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাবে যে, তারা (সরকার) আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ অভিযোগে আটক নাগরিক সমাজের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুসারে ন্যায্য বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।


শেয়ার করুন