চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিশেষ করে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে গ্রুপিং-লবিং চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা এরই মধ্যে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী মাসে কমিটি গঠন করা হতে পারে। এরই মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। উল্লেখ্য, মহানগর ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদের কমিটি ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছে।
চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতি দুটি বলয়ে বিভক্ত। একটি বলয় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অপরটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার অবর্তমানে ছেলে নওফেল বলয়টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে এ দুই নেতার অনুসারীরাই নেতৃত্ব দেবেন। শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের অনুসারী হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসমত খান আতিফ ও মাহমুদুল করিম, ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক তামিম আহমেদ ইফাজ ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুন নবী সাহেদ, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মোশরাফুল হক চৌধুরী পাবেল ও আরাফাত রুবেল, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের আনোয়ার পলাশ, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আশিষ সরকার নয়ন, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিব, হালিশহর থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কালাম, ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজ আহমেদ ফাহিম ও সহসভাপতি মোহাম্মদ শামীম, বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান, ২৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল বাদশার নাম শোনা যাচ্ছে। মাহমুদুল করিম বা হাসমত খান আতিফের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এছাড়া এমইএস কলেজ থেকে শাহেদ ও পাভেল, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে আরাফাত ও আশিষ, মহসিন কলেজ থেকে আনোয়ার পলাশ, মায়মুন উদ্দিন মামুনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। ওয়ার্ড ও থানা কমিটি বিবেচনা করলে নুরন নবী শাহেদ, ফাহিম ও কালামের নাম আলোচনা রয়েছে। ডবলমুরিং থানার সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দারের নাম আলোচনায় থাকলেও এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছনাসহ একাধিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তিনিও শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ গোলাম ছামদানী জনি বলেন, ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এটি যেন কোনোভাবে ঝিমিয়ে না পড়ে। কমিটিতে অছাত্র স্থান পেলে সবার মধ্যে হতাশা কাজ করবে।
সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত বাকলিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নগর ছাত্রলীগের উপসম্পাদক রাশেদ চৌধুরী, উপসম্পাদক ইমরান আলী মাসুদ, নাছির উদ্দিন কুতুবী, হুমায়ুন কবির আজাদ, সহসম্পাদক অরভিন সাকিব ইভান, ওসমান গনি, ফাহাদ আনিস ও কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিন্দ্য দেব আলোচনায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও নগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল আলম রনি বলেন, এক যুগ পর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় নেতাদের সাধুবাদ জানাই। প্রকৃত শিক্ষার্থীদের হাতে যেন নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় সেই কামনা করছি।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আগামী ৬ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদপ্রত্যাশীদের ছাত্রলীগের দপ্তরে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে হবে। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ২৪ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এক বছর মেয়াদের ওই কমিটি ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছে।