রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর চৌরঙ্গী জামে মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, মসজিদের প্রথম তলায় (প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে যেখানে নামাজ আদায় করা হতো তদস্থলে) ২৬টি দোকান ঘর নির্মাণ করে পজিশন বিক্রি এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে মসজিদ কমিটির কিছু নেতার বিরুদ্ধে।
মসজিদের সাধারণ মুসল্লিদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা-পরামর্শ ছাড়াই এবং বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করেই মসজিদের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণ করে পজিশন বিক্রি করা হয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না নিয়েই এরই মধ্যে মসজিদটির ছয় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং মসজিদটি ১০ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।
এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ইতোপূর্বে একজন মুসল্লিকে শারীরিকভাবে মারধর করাসহ অন্য মুসল্লিদের অব্যাহতভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন কমিটির সভাপতিসহ তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি মামলাও করেছেন কয়েকজন মুসল্লি। মসজিদের জায়গায় অননুমোদিতভাবে মার্কেট নির্মাণ কাজ ও পজিশন বিক্রি বন্ধ না করা পর্যন্ত মুসল্লিরা পিছু হটবে না বলেও হুসিয়ারি দেওয়া হয়।
এ নিয়ে শনিবার (১০ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবে সাধারণ মুসল্লিদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চৌরঙ্গী জামে মসজিদের মুসল্লি আমিনুর রহমান বাচ্চু। অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সেক্রেটারি আলিফ উদ্দিন, চৌরঙ্গী জামে মসজিদের মুসল্লি জামাল উদ্দিন, জালাল উদ্দিন আহমেদ, মো: শাহীন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইসলামিক স্কলাররা ফতোয়া দিয়েছেন এই মর্মে যে, মসজিদের যে স্থানে একবার সালাত আদায় ও সিজদা করা হয়েছে, সেই স্থানে উপরে বা নিচে কিয়ামত পর্যন্ত কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তথা দোকান ঘর নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। যারা এই বিধান অমান্য করবে তারা সরাসরি জাহান্নামে নিপতিত হবে এবং দুনিয়াতেও জিল্লতির জীবন পার করবে।
তাই আমরা মুসলমান হিসেবে কোনোক্রমেই তাদের অবৈধ কার্যকলাপ মেনে নিতে পারি না। ঈমান বাঁচানোর তাগিদে ও মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা সাধারণ মুসল্লিরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনতিবিলম্বে মসজিদের এই অবৈধ কমিটির অপসারণ দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ নকশা অনুমোদন ছাড়াই ১০তলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। মুসল্লিরা অভিযোগ করে বলেন, নকশা অনুমোদন না করেই মসজিদের নিচতলায় অবৈধভাবে ২৬টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কমিটির কিছু নেতা মসজিদের জায়গায় দোকান নির্মাণ করে এর পজিশন বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন। সম্প্রতি কয়েকজন মুসল্লি মসজিদ কমিটির এসব বেআইনি কাজের প্রতিবাদ জানালে তাদের মারধর করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে বলে মুসল্লিদের পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে থানায়। মুসল্লিরা জানান, মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আমিনুর রহমান বাচ্চু গত ২০ জুলাই মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা: ইকবাল বারীসহ আটজনের নামে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন।
এ ছাড়া মসজিদের নির্মাণকাজ যাতে আইনসম্মতভাবে করা হয়, তার জন্য রাজশাহীর সিভিল আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, মসজিদ কমিটির এক নেতার অনৈতিক কার্যকলাপের একটি ভিডিও ফাঁস হলেও এ ব্যাপারে কমিটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মামলা দাখিলকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিজুল হক এরআগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আদালত মসজিদ কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
সেই সাথে মসজিদ স্থাপনার নকশাও পেশ করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে চৌরঙ্গী মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা: ইকবাল বারী এরআগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নকশা অনুমোদন নিয়ে মসজিদের কাজ হচ্ছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, চৌরঙ্গী মসজিদ প্ল্যানের জন্য একটি আবেদন এসেছে; কিন্তু এখনো অনুমোদন হয়নি। মসজিদ কমিটি যে নির্মাণকাজ করছে, তা সংশোধন করতে চিঠি দেয়া হয়েছে।