৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:০৪:৫৮ অপরাহ্ন
জোর প্রস্তুতি জ্বালানি বিভাগের, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০২-২০২৪
জোর প্রস্তুতি জ্বালানি বিভাগের, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

গত বছরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পায় সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উৎপাদনের অংশীদার চুক্তি (পিএসসি)। বছর শেষের দিকেই দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনাও নেয় জ্বালানি বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সন মোবিল, শেভরনসহ বেশ কয়েকটি বাঘা বাঘা কোম্পানি আগ্রহও প্রকাশ করে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু বাস্তবতায় কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লেও নতুন বছরের শুরুতে আবারও এর জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। কোনো একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি নয় বরং সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে দরপত্র পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘রোড শো’ করা হবে। দেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগও আহ্বান করা হবে এই রোড-শোর মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে মার্চের শুরুতেই এসব কার্যক্রম শুরু হবে জোরেশোরে।


গত বছরের জুলাইয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবার স্থলভাগের সঙ্গে সঙ্গে জলভাগেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে অনুমোদন হয় পিএসএসির। একই সময়ে দেশের জলভাগে অনুসন্ধান কার্যক্রমে আগ্রহী তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি কোন কোম্পানি প্রাধান্য পেতে পারে তা খুঁজে বের করার কাজও শুরু করে জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে কার্যক্রমে আসে স্থবিরতা। তবে আগামী মার্চেই দরপত্র আহ্বানের কার্যক্রম চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন আবারও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, সাগরে চলমান জরিপ শেষ হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই। রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করব। এক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে দেশে দেশে রোড শো করার। গত বৃহস্পতিবারেই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করছি মার্চেই তা শুরু করতে পারব। এখন আন্তর্জাতিক দরপত্র বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, শীঘ্রই সার্ভে শেষ হবে পুরোটা। সেখান থেকে আমরা একটা ফলাফল পাব। ইতোমধ্যে শেভরন লিখিতভাবে অনুসন্ধান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এক্সন মোবিল আগেই আগ্রহ দেখিয়েছে। লিখিতভাবে আমরা দুজনের অফার পেলাম, সার্ভের রেজাল্ট আসার আগেই। তাদের আমরা অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছি।  আরও যদি কেউ সার্ভে করে তাদের সঙ্গে একটা ‘কম্পিটিটিভ বিডিংয়ে’ যাব।


 


দেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রণিত খসড়া ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্টাক (পিএসসি) ২০২৩’ অনুমোদন দেওয়া হয়। সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এক দশক ধরে ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছিল বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ। চারটি বিদেশী কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি ছেড়ে গেছে বঙ্গোপসাগর। গত ১০ বছরে নতুন করে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এতদিন নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) চূড়ান্ত না হলেও তার চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন হয়েছে ৭ জুলাই। তাই এ কার্যক্রমে আর কোনো বাঁধা থাকল না জানিয়ে ওই দিনই এক প্রতিক্রিয়ায় নসরুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেন, এতদিন তো আমরা নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানি পাচ্ছিলাম না যারা অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এবার এক্সন মোবিলসহ আরও ১০টি ছোট-বড় কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোম্পানি এক্সন মোবিলই। পিএসসির অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের এই পিএসসি বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আগে ছিল দশে। দেশের স্বার্থ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এটি প্রস্তুত হয়েছে। এবার দরপত্র আহ্বানে আর কোনো বাধা রইল না। ঠিক কি উপায়ে বা কত দিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এখন উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করব। এর জন্য বিদেশ থেকেও আমাদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এরপর সমুদ্রে একটা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই হবে। তার পরই দরপত্র আহ্বান। তবে তখন তিনি চলতি বছরের শেষ মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরে অনুসন্ধান চুক্তির আভাস দিয়েছিলেন। যা আপাতত নির্বাচনের আগে হচ্ছে না বলে তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট।


 


জানা যায়, গ্যাস ও খনিজ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিবেচনায় দেশের স্থলভাগকে ২২টি এবং সমুদ্রভাগকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এই ২৬টির মধ্যে ১১টি ব্লক অগভীর সমুদ্রে অবস্থিত। বাকি ১৫টি গভীর সমুদ্রে। এখন পর্যন্ত শুধু অগভীর অংশের দুটি ব্লকে (এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯) অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড। চলতি বছরে তাদের জরিপ কাজের ফলাফল পাওয়ার কথা রয়েছে। যা এখনো পাওয়া যায়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাতে তাদের জরিপ কাজের ফলাফল আসেনি। তবে আশা করছি এ বছরই আসবে।


 


পিএসসির কপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ৩৮টি আর্টিক্যালে ঠিকাদারদের বাধ্যবাধতকা, চুক্তির এলাকা, চুক্তির শর্ত, বাণিজ্যিক আবিষ্কারের মূল্যায়নসহ মূল্য পরিশোধ, কর পরিশোধ সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পেট্রোবাংলা বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই পিএসসির যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। পরে জ্বালানি বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। তার অনুমোদন সাপেক্ষে তা তোলা হয় ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরেই আমরা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করতে চাই।


এর আগে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন পিএসসির কাজ চলেছে। এবার দরপত্র আহ্বানে পালা জানিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জিকে দিয়ে পিএসসির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা নিজস্ব মতামতসহ এটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় গত ফেব্রুয়ারিতে। আগেরটি থেকে এটিতে উৎপাদন ও দাম আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এতে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ কমিটি বিশ্লেষণ করেছে। এর পরই তা অনুমোদন পায়। আমাদের সার্ভেও প্রায় শেষের পথে। আশা করছি আগামী মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই শুরু হবে রোড শোর কার্যক্রম। উন্মুক্ত করা হবে দরপত্র। দরপত্রের কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বর পিএসসি (উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চাই। তবে আমরা এটি নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির জন্য না রেখে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দর আহ্বান করব। যেটা আমাদের দেশের স্বার্থের জন্য বেশি ভালো হবে তাদেরই কাজ দেওয়া হবে।


আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল ও শেভরনের মতো কোম্পানি যারা আগে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। এখানে যে কোম্পানির প্রস্তাব সুবিধাজনক হবে এবং যাদের যোগ্য মনে করা হবে তারাই কাজ পাবে। সবার আগে দেশের স্বার্থ।


শেয়ার করুন