ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুর পরপরই ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিল কংগ্রেস। এই নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়।
সামাজিকমাধ্যমের পোস্টে তিনি দাবি করেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর কোন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়নি।
দিল্লির রাজনৈতিক মহলে অনেক সময়ই গুঞ্জন শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী হতে হতেও অনেকবার হতে পারেননি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ইতি টেনেছিলেন প্রণববাবু।
এদিকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরের ঘটনা তুলে ধরে শর্মিষ্ঠা নিজের পোস্টে লিখলেন, বাবা যখন মারা গেলেন, তখন শোক জ্ঞাপনের জন্যে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকার প্রয়োজনও মনে করেনি। আমাকে সেই সময় এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টদের জন্যে এমনটা করা হয় না। যদিও সেটা মিথ্যা। পরে আমি বাবার ডায়েরি থেকে জানতে পেরেছিলাম, সাবেক প্রেসিডেন্ট কেআর নারায়ণের প্রয়াণে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই সময় শোক বার্তা ড্রাফ্ট করেছিলেন বাবা নিজেই।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লিতে সদর দফতরে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে মল্লিকার্জুন খাড়গে ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, কেসি বেণুগোপালরা। সেই বৈঠকেই মনমোহনের শেষকৃত্য নিয়ে আলোচনা হয়। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ মনমোহনের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে সদর দফতরে। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানেই শায়িত থাকবে তার লাশ। তারপর সেখান শুরু হবে মনমোহন সিংয়ের শেষযাত্রা।
উল্লেখ্য, দেশের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্যে সব কিছু 'বাজি রেখেছিলেন' মনমোহন সিং। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির জন্যে তিনি সেই একই কাজ করেছিলেন। কারণ তিনি এটাকে কেবলমাত্র একটা চুক্তি হিসেবে দেখেননি, বরং পশ্চিমি বিশ্বের সঙ্গে ভারতের 'রিসেট বোতাম' হিসেবে দেখেছিলেন। সেই সময় বামেরা তার সরকার থেকে সর্থন প্রত্যাহার করলেও মনমোহন অনড় থেকেছেন নিজের অবস্থানে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৮টা ১০ মিনিটে মনমোহন সিংকে এইমসের ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর রাত ৯টা ৫১ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপরই কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়, শুক্রবার শোকের আবহে সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল থাকবে। এছাড়াও ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোকপালনের ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গ, জেপি নড্ডারা মনমোহনের বাসভবনে গিয়ে তাকে শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন শুক্রবার।
শনিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে নিগমবোধ ঘাটে। এই শেষকৃত্যের তত্ত্বাবধানে থাকবে সেনা। এই আবহে মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদিকে চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছিলেন, এমন জায়গায় শেষকৃত্য করা হোক, যেখানে স্মৃতিসৌধ করা যাবে। চিঠি লেখার আগে এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছিলেন খাড়গে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে কংগ্রেস। পরে কেন্দ্রের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আজ পূর্ব ঘোষণা মতো শেষকৃত্য সম্পন্ন হোক। পরে মনমোহনের সম্মানে স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্যে জয়াগয়া বরাদ্দ করা হবে। তার জন্যে ট্রাস্ট গঠন করা হবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস