২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:৪৮:০৬ অপরাহ্ন
এবার অসাধু ব্যবসায়ীদের নিশানা ইফতার পণ্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৪
এবার অসাধু ব্যবসায়ীদের নিশানা ইফতার পণ্য

বাড়তি মুনাফা করতে এবার ইফতার পণ্যকে নিশানা করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সংকট না থাকলেও দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে তারা। 


দুই মাসের ব্যবধানের বিভিন্ন বাজার ও এলাকার মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলা, মুড়ি, খেজুর, বেসন, সরিষার তেল, বুটের ডালের দাম ১০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর শরবত তৈরির উপকরণ ইসবগুলের ভুসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া রমজান নির্ভর বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও অহেতুক বাড়ানো হয়েছে। 


বৃহস্পতিবার রাজধানীর জিনজিরা বাজার, কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দিন প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, যা ২ মাস আগেও ৯০ টাকা ছিল। 


বাজারে মান ও দাম ভেদে সাদা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২ মাস আগে যে মুড়ি ৭০ টাকা ছিল তা এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারিমানের তিউনিশিয়ান খেজুর বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা। যা ২ মাস আগে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। 


মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা। যা আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। বুটের ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১১০ টাকা। যা আগে ৯০ টাকা বিক্রি হয়।


এছাড়া ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি দুই মাস আগে ১৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ট্যাং বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা, যা আগে ৮০০ টাকা ছিল। বড় সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা। যা আগে ২০০ টাকা ছিল।


এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর রোজা শুরুর আগে এসব পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়। ক্রেতারা এক দিনের পণ্যের তুলনায় ১০ দিনের পণ্য কেনেন। ফলে বিক্রেতারা সুযোগ নিয়ে কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। এটা যেন একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। মূল্য বৃদ্ধির এই প্রবণতা থেকে বিক্রেতাদের বের হয়ে আসতে হবে। ক্রেতাদের ১০ দিনের পণ্য একদিনে কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি বাজার তদারকি জোরদার করে মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে।’


ইফতারে ছোলা-মুড়ি খেতে কম বেশি সবাই পছন্দ করেন। আর ছোলা-মুড়ি মাখাতে দরকার হয় সরিষার তেল। কিন্তু মাসের ব্যবধানে এই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৭০ টাকা। যা আগে ২৫০-২৬০ টাকা। এদিন প্রতি আঁটি ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা। তবে এ পরিমাণে ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা মাসখানেক আগেও ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।


রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. ইব্রাহিম বলেন, রোজার আগেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। এখন আবার রোজা ঘিরে ইফতার পণ্যে দাম বাড়াতে শুরু করেছে। প্রতিবছর একই ভাবে দাম বাড়লেও নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। সরকার সংশ্লিষ্টরা এসি রুমে বসে বক্তৃতা দেন দাম বাড়বে না। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু বাজারের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। বাড়তি দরেই সব পণ্য কিনতে হচ্ছে। তারপরও তদারকি সংস্থা এসব বিষয়ে কিছু করছে না। তাই আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। যদিও আমাদের আয় বাড়ছে না।


কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। বাকি ছিল রোজায় ইফতার পণ্যের দাম বাড়ানো। এগুলোর দামও এখন হু হু করে বাড়ছে। আর এই দাম প্রতি রোজায় বাড়ানো হয়। এটা যেন বিক্রেতাদের অভ্যাসে নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এটা যেন দেখার কেউ নেই।’ 


একই বাজারের মুদি দোকানি মো. ইকরামুল হক বলেন, ‘হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে সব ধরনের ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই বাড়তি দরে এনে বাড়তি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে কোনো ধরনের সংকট নেই।’


এ বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোজা ঘিরে সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলসহ বেশকিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ইফতার তৈরিতে যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে তার ভেতরে কারসাজি আছে কিনা দেখা হবে। অনিয়ম পেলে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।


শেয়ার করুন