ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে ঢাকায়। মার্কেট-বিপণিবিতান ফ্যাশন হাউজ এবং শো-রুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম রোজা থেকে বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা এখন সাধ্যমতো ঈদের শপিং করছেন। চাঁনরাত পর্যন্ত তাদের কেনাকাটা চলবে। বেচাবিক্রি বাড়ায় খুশি সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে মার্কেটগুলো ভরে উঠছে নতুন ও বাহারি সব পোশাক- আশাকে। ঈদের বাজারে জমজমাট ব্যবসা-বাণিজ্যের আশায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। ঈদের দুদিন পরই এবার বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ পালিত হবে সারাদেশে। মূলত এই দুই উৎসব ঘিরে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ফলে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ এসেছে ঈদকে ঘিরে। আশা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ বেচাকেনায় গতি ফিরবে অর্থনীতিতে।
জানা গেছে, এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখে সারাদেশে অন্তত ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনমান উন্নত হওয়ায় তাদের ভোগব্যয় ও কেনাকাটা বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন উৎসব কেন্দ্রিক এই বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ ঈদের কেনাকাটায় সাধারণত ব্যবহার করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। ঈদকে ঘিরে এই বাজারে দিন দিন আরও বড় হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক কোটি প্রবাসী তাদের আত্মীয়-স্বজনকে ভালোভাবে রোজা, ঈদ উদযাপন এবং পহেলা বৈশাখের কেনাকাটার জন্য রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী বিশেষ করে পোশাক, ইলেক্ট্রনিক্স, গহনা, প্রসাধনী, ফার্নিচার এবং গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে। ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১৫ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে আরও অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদকে ঘিরে। যার পরিমাণ হবে প্রায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও উন্নত হয়েছে। অস্থিরতা ও উদ্বেগ কেটে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। এমনকি ভোক্তা ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে দেশে। সব মিলিয়ে ঈদে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের অন্যান্য সংগঠন। ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আগের কয়েক বছর করোনা মহামারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। এখন করোনা নেই এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে। সাধারণ মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটায় শামিল হবেন।
শবে বরাতের পর থেকে মার্কেট-শপিংমলে ভিড় বাড়ছে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মার্কেট- বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউজ এবং শো-রুমগুলোতে ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। শবে-বরাতের পর থেকে মার্কেট, শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত-ইসলামপুর, উর্দুরোড এবং বুড়িগঙ্গা নদীর ওপার কেরানিগঞ্জের পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে ইতোমধ্যে সব ধরনের পোশাক-আষাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের মার্কেটগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি মার্কেট থেকে ইতোমধ্যে সব ধরনের পোশাক ও অন্যান্য উপকরণ সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। ফলে মার্কেটগুলোতে বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। যারা থান কাপড় কিংবা থ্রি পিস বানিয়ে পরেন তারা ভিড় করছেন দর্জিপাড়ায়। ফলে কাজের ব্যস্ততায় দর্জিরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ার বাসিন্দা কামরুন নাহার জানান, তিনি গাউছিয়া মার্কেট থেকে থ্রিপিসের কাপড় কিনে ওই মার্কেটের দোতলায় বানাতে দিয়েছেন। একইভাবে তাঁর স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি ও পাইজামার কাপড় কিনেছেন নিউমার্কেট থেকে। সেটি বানানো হবে রমনা ভবনে। দর্জিরা জানিয়েছেন, ১০ রোজার পর তারা আর অর্ডার নিতে পারবেন না। এবার শবে-বরাতের পর থেকে তাদের কাজ বেড়েছে।
এ ছাড়া রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি মার্কেট, নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক, চ›িন্দ্রমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, গাউসল আজম মার্কেট, রাইফেলস স্কয়ার, ক্যাপিটাল মার্কেট, ধানমন্ডি প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজায় দেখা গেছে থরে থরে সাজানো হয়েছে নতুন পোশাকে। থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক কেনায় আগ্রহী বেশি ক্রেতারা। এছাড়া বেইলি রোড থেকে পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা। যদি বেইলি রোডের কাচ্ছি ভাইতে আগুন লাগার ঘটনায় সেখানে ক্রেতা উপস্থিতি এবার একটু কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বিকেল এবং সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে বেইলি রোডের শো-রুমগুলোতে। এ ছাড়া তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, ওয়ারী র্যাঙ্কিন স্ট্রিট, বেইলি রোড এবং মিরপুর রোডের ফ্যাশন হাউজগুলো এখন ভরপুর নতুন নতুন পোশাকে। বেচাবিক্রিও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া আড়ং, বাংলার মেলা, ক্যাটস আই, মেনজ ক্লাবসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতে বাহারি ডিজাইন ও রংয়ের পোশাক আনা হচ্ছে। রোজার শুরু থেকে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।