০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:৪৯:২৭ পূর্বাহ্ন
দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ের প্রভাব আন্দোলনেও
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৩-২০২৪
দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ের প্রভাব আন্দোলনেও

কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা-উপজেলাসহ সব স্তরেই স্থবির হয়ে আছে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের আগে সংগঠন গোছানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিপূর্ণভাবে তা করতে পারেনি দলটি। ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৫টিরই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। অধিকাংশ জেলায় আংশিক আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। তাদের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও জেলায় ইউনিট কমিটির অর্ধেকও শেষ করতে পারেনি। যে কারণে এসব জেলার সম্মেলন হয়নি। কমিটি গঠনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের তৎপরতা কিংবা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের কারণে প্রবল হয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং। যার প্রভাব পড়েছে আন্দোলনেও। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হরতাল, অবরোধ, গণসংযোগ কর্মসূচিতে মাঠে দেখা যায়নি অধিকাংশ জেলার দুই শীর্ষ নেতাকে। যা নিয়ে তৃণমূলেও ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। দলটির সাংগঠনিক জেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘এই সরকার একদলীয় শাসনের মাধ্যমে এমন একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, সেখানে কাউন্সিল পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। জেলায় কাউন্সিল করতে গেলে হয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আক্রমণ করেছে অথবা পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে কাউন্সিলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এভাবে নানা কায়দায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সরকার ব্যাহত করেছে। বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় দল। দলের পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আন্দোলনের পাশাপাশি পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও চলবে।’


তবে নির্বাচনের আগে প্রায় আড়াই মাসের আন্দোলনে সাংগঠনিক জেলা নেতাদের ভূমিকা নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণের বিষয়ে একাধিক স্থায়ী কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা জানিয়েছেন, তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গণহারে গ্রেফতার করেছেন। রাস্তায় বের হলেই লাঠিচার্জ, গুলি ও গ্রেফতার করেছে। এমনকি নেতাকর্মীদের পরিবারও ছিল আতঙ্কে। তাছাড়া বিএনপিকে ভাঙারও একটি ষড়যন্ত্র ছিল। সবকিছু বিবেচনায় হয়তো অনেকে মাঠে নামেননি। তবে রাজপথে যারা ছিলেন তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।


জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন নিয়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জেলাসহ ইউনিটের শীর্ষ নেতাদের কার কোথায় ভূমিকা তার রিপোর্ট দিয়েছে হাইকমান্ডকে। তবে রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু নেতার ভূমিকা নিয়ে সাধারণ কর্মীদের প্রশ্ন প্রকট। ওই সময়ে আন্দোলন মনিটরিং করেছেন হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা। তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আন্দোলনে দশ সাংগঠনিক বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক জেলার ভূমিকা সন্তোষজনক। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তর জেলার আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক, দক্ষিণের সদস্য সচিব, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মাঠে দেখা যায়নি, ময়মনসিংহ বিভাগের দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক, নেত্রকোনার সদস্য সচিব ও শেরপুরের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন না। সিলেট জেলা সভাপতি অধিকাংশ সময় ঢাকা ছিলেন, মাঝে মাঝে এলাকায় গিয়ে দু-একটা কর্মসূচিতে শরিক হন, হবিগঞ্জের আহ্বায়ক বিদেশে। রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, সৈয়দপুরের শীর্ষ নেতারাসহ আরও কয়েকটি জেলার শীর্ষ নেতৃত্বকে মাঠে দেখা যায়নি। যদিও রংপুর জেলার সদস্য সচিব ১০ বছরের সাজা নিয়েও সার্বক্ষণিক মাঠে ছিলেন। হাতেগোনা কিছু জেলা ছাড়া অধিকাংশ জেলায় মিছিল হয়েছে শুধু ছবি তুলে বিএনপি মিডিয়া সেলে ও একটি নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। থানা-জেলারও অনেক নেতা ঢাকায়, এমনকি দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন। সাবেক সংসদ-সদস্য, প্রভাবশালী সংসদ-সদস্য প্রার্থী যারা প্রতিনিয়ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের মধ্যেও অনেকে ঢাকায় ছিলেন। তাদের উপজেলা এবং জেলাতে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি পালিন হয়নি। মনিটরিংয়ের নামে নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন অনেকে। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যেও অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। নেতাকর্মীরা কারও কারও ফোন বন্ধ পেয়েছেন। আর্থিক বিষয়ে দল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বেশিরভাগ জেলায়ই যাকে আর্থিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া দরকার তাকে দেননি। যা দিয়েছেন তাদের পছন্দের লোকদের, প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। তবে অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলার দুই শীর্ষ নেতা ছাড়া কমিটির অনেকে মাঠে ছিলেন। এমনকি বেশ কিছু জেলায় পদবিহীন ও সাবেক নেতাদেরকেও নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।


শেয়ার করুন