নতুন অর্থবছরে কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘একচ্ছত্র’ ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছেন কর কর্মকর্তারা। এবার ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণ হবে ‘গাণিতিক ফর্মুলা’ বা ‘স্বনির্ধারণী’ পদ্ধতিতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মনে করছে, এ পদ্ধতিতে কর আদায় দ্রুত হবে। আপিল সংখ্যার পাশাপাশি কমবে ভোগান্তিও।
এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে ‘আয়কর বিল ২০২৩’-এ। গত বছরের ১৮ জুন আইনটি সংসদে পাস হলেও চলতি অর্থবছর তা প্রয়োগ হয়নি। আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ হবে বলে এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, আগামী অর্থবছরে সব শ্রেণীর করদাতাকে ‘স্বনির্ধারণী’ (ভলান্টারি সেলফ কমপ্লায়েন্স) পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হবে। আগে দেয়া হতো সাধারণ পদ্ধতিতে। সাধারণ নিয়মে জমা দেয়া রিটার্নের আয়কর নির্ধারণ করেন কর কর্মকর্তা। আর ‘স্বনির্ধারণী’ পদ্ধতিতে রিটার্ন শুধু অডিট করা হয়। অডিট পর্যায়ে সেটি সঠিক মনে না হলে কর কর্মকর্তা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ পাবেন।
নতুন আয়কর আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায় গত বছরের ২৩ জানুয়ারি। ওই দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে বলেন, ‘বর্তমান নিয়মে কর নির্ধারণ হয় কর্মকর্তার ক্ষমতাবলে, তিনি যেটা যৌক্তিক মনে করবেন সেভাবে হবে। এখন গাণিতিক ফর্মুলা দেয়া হয়েছে। এ ফর্মুলায় যে রেজাল্ট আসবে, সেটাই হবে নির্ধারিত ট্যাক্স। অফিসার নিজে ইচ্ছা করলেই বাড়াতে বা কমাতে পারবেন না।’
এর ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমার ওপর কত ট্যাক্স ধার্য হবে, আগে আয়কর কর্মকর্তা সেটা কিছুটা ডিসাইড করতেন। আয়কর কর্মকর্তার কাছে যেটা যৌক্তিক বলে মনে হতো, সেটা উনি করতে পারতেন। এতে আপিলের সংখ্যা বেড়ে যেত। আমাকে করতেন, আমি মানতাম না, আমি তখন আপিলে চলে যেতাম। এখন যেটা করা হয়েছে, ওই কর্মকর্তার সাবজেক্টিভ জাজমেন্টের ওপর নয়, বরং একটা ফর্মুলা করা হয়েছে, সেখানে অবজেক্টিভ ইনফরমেশনগুলো দেবেন, ফর্মুলা আপনাকে ক্যালকুলেট করে দেবে। এতে হয়রানির সুযোগ কমে যাবে।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) আলমগীর হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতেও কিন্তু কর অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) হবে। রিটার্ন যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে অ্যাসেসমেন্ট দরকার নেই। এটা গ্রহণ করে নেয়া হবে। কিন্তু রিটার্ন ঠিক না থাকলে শুনানিতে ডাকা হবে, কাগজপত্র চাওয়া হবে, অডিট হবে। তখন তো অ্যাসেসমেন্টও হবে।’
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে কর আদায় দ্রুত হবে। হয়রানি কমবে। আমি এটাকে স্বাগত জানাই। নতুন কর আইনের উদ্দেশ্যই ছিল সেবা সহজ করা। কর কর্মকর্তাকে কর নিরূপণের ক্ষমতা বেশি দেয়া থাকলে করদাতারা নিরুৎসাহিত হন।’ তিনি আরো বলেন, ‘জটিলতা কাটিয়ে করদাতাকে স্বেচ্ছায় দায়িত্বশীল করে তুলতে না পারলে কর সংস্কৃতির উন্নতি হবে না।’