২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৬:৩৬:৫৬ অপরাহ্ন
বেসরকারি কোম্পানি চালাতে পারবে ট্রেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৪
বেসরকারি কোম্পানি চালাতে পারবে ট্রেন

বেসরকারি কোম্পানি রেলওয়ের লাইন, সিগন্যালিং ব্যবস্থা ও স্টেশন ব্যবহার করে নিজস্ব বগি-ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করতে পারবে– এমন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে আইন ২০২৪-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।


খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই ট্রেনের সংঘর্ষ কিংবা ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যাত্রীর মৃত্যু হলে রেলওয়ে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। আহত হলে বিভিন্ন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। টাকা দেওয়া হবে বীমা তহবিল থেকে। খসড়ায় ট্রেনে পাথর ছোড়াসহ বিভিন্ন অপরাধে জেল-জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অকারণে চেইন টেনে ট্রেন থামানোর জরিমানা ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে।


 


পাথর ছুড়ে যাত্রীদের হতাহত করা এবং ট্রেনের ক্ষতিসাধনের সাজা বহু গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। ঢিলের আঘাতে ট্রেনের ক্ষতির সমপরিমাণ জরিমানা দিতে হবে দায়ী ব্যক্তিকে। এ ছাড়া হবে কারাদণ্ডের বিধান। পাথরের আঘাতে যাত্রীর মৃত্যু হলে দায়ী ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার সুপারিশ রয়েছে খসড়ায়।


১৮৯০ সালের ব্রিটিশ আমলের আইনে চলছে রেল। ১৯৭৭ সালে এর সংশোধন হয়। রেলের জন্য করা নতুন আইনের খসড়ার প্রায় ৯০ শতাংশ ধারা-উপধারা ১৩৪ বছরের পুরোনো আইনের হুবহু বাংলা অনুবাদ। যেমন– রেলের ফেরি সার্ভিস, সমুদ্রসেবা সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলেও নতুন আইনের খসড়ায় তা রাখা হয়েছে।


 


গতকাল সোমবার রেল ভবনে খসড়া নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর সমকালকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে খসড়াটি। আরও কয়েক ধাপ পেরিয়ে তা চূড়ান্ত হওয়ার পর মন্ত্রিসভায় যাবে। সেখানে অনুমোদন পেলে সংসদে যাবে। পাস হলে আইনে পরিণত হবে।


খসড়ার ১২টি অধ্যায়ে ১৫৭টি ধারা রয়েছে। ১৮৯০ সালের আইনে ১১টি অধ্যায়ে ১৫০টি ধারা রয়েছে। নতুন যোগ হওয়া অধ্যায়টি রেলের মহাপরিচালক, মহাব্যবস্থাপক পদ-সংক্রান্ত। আইনের পঞ্চম অধ্যায়টি শুধু রেলপথের সুবিধা-সংক্রান্ত। নতুন আইনের খসড়ায় এতে বীমা ও মামলা-সংক্রান্ত বিষয় যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।


বর্তমান আইন অনুযায়ী, সরকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করবে। নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী, এ ক্ষমতা সরকারের হাতেই থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হবে বীমার চার্জ নির্ধারণের ক্ষমতা। অর্থাৎ, খসড়ার ৪৪ ধারায় বীমা তহবিল গঠনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে টাকা কোন খাত থেকে আসবে, তা নির্ধারণ করবে সরকার। রেল সূত্র জানিয়েছে, ট্রেনের ভাড়ার সঙ্গে বীমার টাকা নেওয়া হবে।


৪৪ ধারা অনুযায়ী, বীমার টাকা রেলের পরিবহন করা পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি এবং যাত্রী হতাহত হলে ক্ষতিপূরণে খরচ করা যাবে। ৮৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে সংঘর্ষ হলে বা ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে কেউ হতাহত হলে রেলওয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। সংস্থাটির ভুল না থাকলেও হতাহত যাত্রী এবং তাঁর পণ্যের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৮৭(২) ধারা অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরাধিকারীদের ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ১৮৯০ সালের আইনে মাত্র ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। আহতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। নতুন আইনের খসড়ায় অঙ্গহানিতে এক লাখ, অন্ধত্বের জন্য দুই লাখ, হাড় বা দাঁত ভাঙার জন্য লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।


আইনের খসড়ার দুটি ধারায় রেলওয়েতে বেসরকারি ট্রেন পরিচালনার সুযোগ তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। ৪৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, সরকারের পূর্ব অনুমতি নিয়ে রেলওয়ে বাংলাদেশি কোম্পানিকে রেলপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে চুক্তি করতে পারবে। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে এমন কোনো দেশীয় কোম্পানি কিংবা বিদেশি রেলওয়ে কোম্পানিকেও রেলপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে চুক্তি করতে পারবে। উপধারা ২ অনুযায়ী, রেললাইন ব্যবহারের ফি হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে রেলওয়ে।


বিদ্যমান আইনে না থাকলেও নতুন আইনের খসড়ার ১৫১ ধারায় বলা হয়েছে– যাত্রী, পণ্য, পার্সেল পরিবহনের জন্য গঠিত বাংলাদেশি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে রেলওয়ে। উপধারা ২ অনুযায়ী, ওই কোম্পানির রোলিং স্টোকের (ইঞ্জিন-বগি) চলাচলের জন্য রেললাইন, স্টেশনসহ ভৌত অবকাঠামো ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে রেল কর্তৃপক্ষ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এবং সরকারের অনুমোদিত যে কোনো পদ্ধতিতে বেসরকারি কোম্পানি ট্রেন পরিচালনা করতে পারবে।

বর্তমানে কয়েকটি কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করে বেসরকারি ইজারাদার। সেগুলোর ইঞ্জিন-বগি রেলের সম্পত্তি। নতুন আইন হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিন-বগি কিনে ট্রেন পরিচালনায় আসতে পারবে। এতে রেলের কারও কারও আশঙ্কা বেসরকারীকরণের দিকে যেতে পারে রেলওয়ে।


রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী সমকালকে বলেছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। রেলের ইঞ্জিন-বগির ব্যবস্থাপনায় শেড, ওয়ার্কশপসহ বিশাল অবকাঠামো প্রয়োজন। এ জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে তা হওয়া কঠিন।


বর্তমানে ট্রেনে মাতলামির সাজা ২০ টাকা জরিমানা। নতুন আইনের খসড়ায় তা বাড়িয়ে হাজার টাকা অথবা এক বছর কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। রেলওয়ের কর্মচারী কোনো যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে দুই বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। বর্তমানে এ অপরাধের শাস্তি ৫০০ টাকা জরিমানা। বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণে দুই হাজার টাকা, টিকিট কালোবাজারিতে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছরের কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। পিকেটিং বা অন্য কোনোভাবে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটালে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাদণ্ডের সুপারিশ রয়েছে খসড়ায়।


শেয়ার করুন