২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২২:১৯ অপরাহ্ন
৩০ হাজার টিকিট ‘হিট’ ১ কোটি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২৪
৩০ হাজার টিকিট ‘হিট’ ১ কোটি

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। রোববার ১২ জুনের টিকিট বিক্রি হয়। এদিন অনলাইনে ছাড়া হয় ৩০ হাজার টিকিট। এর বিপরীতে ‘হিট’ (ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য ওয়েবসাইটে চেষ্টা) পড়েছে প্রায় ১ কোটি। অথচ একজন যাত্রী ন্যূনতম ৪টি করে টিকিট কাটলে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার লোকই টিকিট পাচ্ছেন। আজ ১৩ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে।


রোববার সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট ছাড়া হয়। মোট টিকিট প্রায় ১৫ হাজার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কেবিন, এসি ও শোভন চেয়ারের সিট বিক্রি হয়ে যায়। আর ২০ মিনিটে শেষ সব টিকিট। একই অবস্থা পূর্বাঞ্চলেও। দুপুর ২টায় এ অঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রায় ১৫ হাজার টিকিট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, দিন যত যাবে টিকিটের জন্য হাহাকার ততই বাড়বে। ‘হিট’ও বাড়বে।


এদিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ টিকিট কাউন্টার বন্ধ। কোনো কাউন্টার থেকেই ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। তবে কিছুসংখ্যক লোক কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে অগ্রিম টিকিট কাটার আকুতি জানাচ্ছিলেন।


রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে আসা হিরণ মিয়া যুগান্তরকে জানান, তিনিসহ তার পরিবারের তিন সদস্য অনলাইন অ্যাপসে প্রায় অর্ধশতবার চেষ্টা করেছেন-টিকিট কাটতে পারেননি। বাধ্য হয়ে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন। স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রার কোনো টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে না।


এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির যুগান্তরকে বলেন, সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলে চলা আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। মোট ১৫ হাজার টিকিট বরাদ্দ ছিল। ২০ মিনিটে প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। ঈদযাত্রায় যারা টিকিট কাটতে পেরেছেন-এদের প্রায় সবাই ৪টি করে টিকিট কাটেন।


তিনি আরও বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে টিকিট ছাড়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে অনলাইনে ৬০ লাখ ২৫ হাজার ৮৩০টি ‘হিট’ পড়ে। আর পূর্বাঞ্চলে হিট পড়ে ৪০ লাখের বেশি। এবারও টিকিট কালোবাজারি নেই। তবে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ টিকিটগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি ট্রেনে কেবিন ও এসি চেয়ারের সংখ্যা শোভন চেয়ার, শোভন সিট সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। ফলে কেবিন ও এসি চেয়ার মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়।


কমলাপুর স্টেশন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা যায়, কিছুসংখ্যক যাত্রী ঈদ করতে গ্রামে ছুটছেন। এদের মধ্যে রংপুরগামী যাত্রী সিরাজ মিয়া জানান, ৫ দিন আগে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪টি টিকিট কাটতে পেরেছেন। অসুস্থ স্ত্রী, মা ও দুই সন্তানকে আগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।


রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, কয়েক বছর ধরে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে কাউন্টার থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে সাধারণ যাত্রীদের ২-৩ দিন পর্যন্ত স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হওয়ার পর ওই দৃশ্য আর চোখে পড়ছে না। তবে অনলাইনে টিকিট না পেয়ে অনেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা টিকিট কাটতে পারছে না-তাদের জন্য শুধু যাত্রার দিন কাউন্টার থেকে ২৫ শতাংশ আসনবিহীন (স্ট্যান্ডিং) টিকিট বিক্রি করা হবে।


এদিকে আজ বিক্রি হবে ১৩ জুনের টিকিট। একইভাবে ৪ জুন ১৪ জুনের, ৫ জুন ১৫ জুনের, ৬ জুন দেওয়া হবে ১৬ জুনের অগ্রিম টিকিট। ঈদযাত্রার ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১০ জুন। ১০ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৪ জুনের ফিরতি অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৮টা এবং দুপুর ২টায় অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়।


রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, ট্রেন সংখ্যার সঙ্গে সিট সংখ্যা বাড়ানো গেলেই কেবল মানুষের প্রত্যাশা কিছুটা পূরণ করা যাবে। আমরা শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছি। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তবে যারা হিট করছেন, তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক মানুষ টিকিট কাটতে পারছেন। ২৯ থেকে ৩৪ হাজার টিকিটের বিপরীতে দুই অঞ্চলে প্রায় ১ কোটি মানুষ ওয়েবসাইটে হিট করছেন।


এবার চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে দুই জোড়া। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল এক জোড়া, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল এক জোড়া, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল এক জোড়া, ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল দুই জোড়া এবং জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল এক জোড়া ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া পার্বতীপুর-দিনাজপুর রুটে এবং ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর রুটে গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল ট্রেন দুই জোড়া চলবে। চাঁদপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেনগুলো ১২ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরদিন থেকে ৭ দিন চলাচল করবে।


তবে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ও গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে। পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল ১৩ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত তিন দিন চলবে। আবার ঈদের পর ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিন চলবে। রেলের পশ্চিমাঞ্চলে কুরবানির পশু পরিবহণের জন্য ১২ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ‘ক্যাটল ট্রেন’ পরিচালনা করা হবে। আর পূর্বাঞ্চলে ক্যাটল ট্রেন চলবে ১২ জুন।


শেয়ার করুন