২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৮:০৬:০৭ পূর্বাহ্ন
নিত্যপ্রয়োজনীয় ৩০ পণ্যে কমছে কর
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২৪
নিত্যপ্রয়োজনীয় ৩০ পণ্যে কমছে কর

বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ৩০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উেস কর কমানো হচ্ছে। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্যে উেস কর ২ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের শীর্ষ ১০ লক্ষ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।


এ বিষয় বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ ক্ষেত্রে কর আহরণে ছাড় দিতে যাচ্ছে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্য তেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা, সব ধরনের ফলসহ ৩০টি পণ্যে করছাড় দেওয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যমান উচ্চমূল্য থেকে কম মূল্যে পণ্যগুলো ভোক্তারা কিনতে পারবে।


 


অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।


এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে। বিশেষ করে কম আয়ের মানুষের ব্যবহার্য খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমের সঙ্গে বাজেটপূর্ব আলোচনায় একই কথা বলেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।


 


উেস কর কমার সঙ্গে বাজারে পণ্যের দাম কমবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন।


 


কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, শুল্ক-কর বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে তা বাস্তবায়ন হয়ে যায়। তবে এর বিপরীত চিত্র চোখে পড়ে না। শুল্ক কমানো হলেও বাজারে আগের দামেই পণ্য বিক্রি হয়। তখন দাম বেশি রাখার নানা ধরনের অজুুহাত তুলে ধরা হয়।


তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার সরকারকে নিত্যপণ্যের করহার যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার সুপারিশ করেছি।


এখানে উেস কর যদি ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করতে পারে, সে ক্ষেত্রে বাজার স্থিতিশীল রাখতে এই হার শূন্য করে দিলে কী সমস্যা ছিল?’ বাজারে নিত্যপণ্যের ওপর কোনো ধরনের করই থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।


 


তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন নীতিনির্ধারকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজেটে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ জন্যই নিত্যপণ্যের ওপর করের হার কমানো হচ্ছে। সরকারের সদিচ্ছা আছে বলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন।


৩০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উেস কর কমানোর পাশাপাশি শিশুখাদ্যেও কমছে করভার। বর্তমানে আড়াই কেজি ওজন পর্যন্ত গুঁড়া দুধের ওপর করভার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮.৬০ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে গুঁড়া দুধের বাল্ক আমদানিকারকদের জন্য মোট করভার ৩৭ শতাংশ।


সূত্র জানায়, গত ১৫ মে গণভবনে বাজেটবিষয়ক সভায় বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকেও নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বাজেটে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অনুবিভাগের নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কোনো বাড়তি করারোপ না করা এবং কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.২৯ শতাংশ। খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যবহির্ভূত জিনিসপত্রের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মার্চ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.২২ শতাংশ।


এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগের মাসের ৬.৩৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬.২৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩৯ পয়েন্ট। এপ্রিল মাসে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ এলাকার মানুষ বেশি মূল্যস্ফীতির শিকার হয়েছে।


দেশে মাঝেমধ্যে অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্যের আকস্মিক লাগামহীন মূল্যে ক্রেতাও দিশাহারা হয়ে পড়ছে। বাজারের এই অস্থিরতা দূর করতে বিভিন্ন সময়ে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এতে বাজারে তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদ ও অন্যান্য বিশেষ পরিস্থিতিতে এনবিআরের কাছে কর কমানোর জন্য চিঠি দেওয়া হলেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে অনেক দেরি হয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের সুরে বলেছে, আমরা চিঠি দেওয়ার কয়েক মাস পর এনবিআর সে বিষয়ে কাজ করে। যখন তারা কর কমায়, তখন আর দৃশ্যত কোনো লাভ হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বয় রেখে কাজ করতে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।


শেয়ার করুন