২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:১৩:৪৮ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে চামড়া নিয়ে বিপাকে বিক্রেতারা, গরুর সঙ্গে ছাগলের চামড়া ফ্রি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৬-২০২৪
রাজশাহীতে চামড়া নিয়ে বিপাকে বিক্রেতারা, গরুর সঙ্গে ছাগলের চামড়া ফ্রি

গত বছরের ন্যায় এবারো কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারা। অনেকেই চামড়ার দাম না পেয়ে মাটিতে পুতে রেখেছেন, আবার কেউ কেউ চামড়া পানির দামে বিক্রি করেছেন। একই সাথে এবার একটি গরুর চামড়া কিনলে ছাগলের চামড়া ফ্রি দেয়া হয়েছে।


ঈদের দ্বিতীয় দিন গরু কোরবানি দিয়ে নিজেই চামড়া বিক্রি করতে গিয়েছিলেন মহানগরীর সপুরা এলাকায় আজমত আলী। কিন্তু গরুর চামড়ার দাম ৬০০ টাকা বলায় ব্যবাসায়ীর ওপর বেজায় চটে গিয়েছিলেন আজমত আলী। তবে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত তার কোনো সদুত্তর পাননি তিনি। তবে কেবল আজমত আলীই নন, রাজশাহীতে কোরবানির পর পশুর চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে সবারই এখন নাজেহাল অবস্থা। সরকার কোরবানির মৌসুমে চামড়ার দাম নির্ধারণ ও পাচার রোধে নানা উদ্যোগ নিলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না কেউই। গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও চামড়ার বাজারের কেনাবেচায় ধস নেমেছে।


এবার আড়তগুলোতে ছোট বড় আকৃতি গরুর চামড়া গড়ে ২০০-৭০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৫-১০ টাকা হারে বিক্রি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে (যাদের গরু ছাগল দুটোই ছিল) গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ‘ফ্রি’ও নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রি করতে গিয়ে দাম নিয়ে খুশি হতে পারেননি বিক্রেতারা। সর্বোচ্চ এক বা দুই লাখ টাকার গরুর চামড়াও ৭০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়নি। আর ছাগলের চামড়া ব্যবসায়ীরা নেননি। প্রথম দিন কেউ কেউ পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ছাগলের চামড়ার দাম পেলেও ঈদের দ্বিতীয় দিনে বিনামূল্যেই এ চামড়া দিয়েছেন বিক্রেতারা।


এছাড়া ছোটখাটো অজুহাতে কোরবানির পশুর চামড়া ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেককেই। যারা না বুঝেশুনে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে বাড়তি দামে কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন তারা তো চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকা ছাড়াও নওদাপাড়া, শালবাগান, দড়িখরবোনা, লক্ষ্মীপুর ও তালাইমারীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।


এর আগে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গত ৩ জুন কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেই অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। আর ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি রাজশাহীর মতো বিভাগীয় শহরে বা বাইরের জেলায়।


রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকার ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন জানান, গরু-ছাগলের কাঁচা চামড়া (লবণ ছাড়া) ব্যবসার সেই রমরমাভাব আর নেই। এ বছরই প্রথম নয়, কমপক্ষে ৯ থেকে ১০ বছর থেকে একই অবস্থা চলেছে। গরুর চামড়া কিনে কিছুটা দাম পাওয়া গেলেও ছাগলের চামড়া কিনে পরে ফেলে দিতে হয়েছে। আড়তদারও নানা কারণ দেখিয়ে নিতে চান না। তাই এবার তেমন কেউই ছাগলের চামড়া কিনেন নি। বাড়িতে থাকলে পচে দুর্গন্ধ বের হবে। এ ভয়ে উপায় না পেয়ে অনেকেই টাকা ছাড়াই তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ছাগলের চামড়া। তারা বেশিরভাগ গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। গতবার সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় কিনেছিলেন। কিন্তু এ বছর দাম একটু বাড়ায় তারাও একটু বাড়তি দাম দিয়ে কিনেছেন। এছাড়া ছোট ও মাঝারি গরুর চামড়া ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকা পিস করে কিনেছেন বলেও জানান।


অন্যদিকে মহানগরীর মালদহ কলোনি এলাকার মো. সোহেল নামে এক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, চামড়ার দাম বেশি মনে করে তিনি কোনো কিছু না ভেবে ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির চামড়া কিনেছিলেন। সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা পর্যন্ত ৫০ পিস চামড়া কিনেছিলেন তিনি। পরে সপুরার পাইকারি আড়তে গিয়ে বুঝতে পারেন মস্তবড় ভুল করে ফেলেছেন। এরপর আর কী করা, লোকসানেই চামড়াগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। লাভ তো দূরে থাক মৌসুমি এ ব্যবসায় সামান্য কিছু পুঁজি লাগিয়ে তাও তুলতে পারেননি। আর পাড়া-মহল্লা ঘুরে ঘুরে চামড়া কেনার হাড়ভাঙা খাটুনির কথা তো বাদই।


রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, এ বছর চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। তবে তার খুব একটা প্রভাব কেনাবেচায় পড়েনি। কিন্তু সব জায়গায় যে সর্বোচ্চ ৭০০ চামড়া কেনা-বেচা হয়েছে বিষয়টি তেমন নয়। কোথাও কোথাও এক হাজার টাকায়ও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। তবে ছাগলের চামড়ার দম কম। আর এটা বরাবরই এমনই।


তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষ ছাগলের চামড়া ছাড়ানোর সময় সতর্ক থাকেন না। এতে চামড়া ফুটো হয়ে, কেটে যায় ও নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য আড়তদাররা ত্রুটিপূর্ণ এ চামড়া কিনতে চান না। আর এবার কী পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ বা কেনা-বেচা হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। কারণ অধিকাংশ মানুষই প্রথম দিন কোরবানি দিয়েছেন। তবে আজও অনেক মানুষ পশু কোরবানি করেছেন। তাই এর সঠিক হিসাব পেতে সময় লাগবে। তবে দামের তারতম্য থাকলেও আমদানি ভালো বলে উল্লেখ করেন এ চামড়া ব্যবসায়ী নেতা।



শেয়ার করুন