২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৫:১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান ফখরুলের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২৪
সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান ফখরুলের

ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। 


ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ছাত্রদের এই যৌক্তিক, ন্যায় সংগত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমারা তাদের নতুন ঘোষণাকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই ভয়াবহ দানবীয় খুনী শাসক গোষ্ঠীর পতনের লক্ষে সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবি, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে এই অবৈধ খুনী হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।"


তিনি বলেন, "জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা আশ্রয় নিয়েছে তা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।"


ফখরুল বলেন, "ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পাখি শিকারের মত নির্বিচারে গুলি করে লাশের পর লাশের পর লাশের স্তুপ সৃষ্টি করেছে, ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। সরকার তাদের এই বর্বরতা আড়াল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কিছু স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, এর দায় বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে।"


তিনি বলেন, "এজন্য মিথ্যা অভিযোগে নিরীহ ছাত্র জনতার সাথে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সিনিয়র নেতা, কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়। আটকাভিযান এখনও চলছে। আন্দোলন দমাতে সান্ধ্য আইন দিয়ে, সেনা বাহিনী নামিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে রাতে বিভিন্ন এলাকায় ব্লক রেইট দিয়ে নিরীহ ছাত্রসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা কয়েছে। আটক করতে যেয়ে বাসা বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ছাত্র ও নেতাকর্মীদের পরিবার-পরিজনের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ করছে।" তিনি বলেন, "আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে না পেয়ে তাদের বাবা, ভাই ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি।


মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ আড়াল করতেই তথাকথিত তৃতীয় পক্ষ আবিষ্কারের জন্য সরকারের বিরামহীন এই প্রচেষ্টা চলছে, যা জনসাধারণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।"


তিনি বলেন, "সরকার প্রথম থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবি অস্বীকার করে নিষ্ঠুর ভাবে দমন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশকে ধ্বংস ও নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে । ছাত্র আন্দোলন বলপূর্বক দমন করতে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে চলছে নজির বিহীন তৎপরতা। দেশে আজ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চারিদিকে শুধু অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। এর সম্পূর্ণ দায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকারের।"


তিনি বলেন, "শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনে  গণহত্যা, নৈরাজ্য, ধ্বংস, দমন, নিপীরণ দেখে সারা বিশ্ব স্তম্ভিত। সরকার ছাত্র, যুবক, শিশু, নারীসহ জনতাকে নির্বিচারে নির্দয়ভাবে হত্যা করে মানবতাকে হত্যা করেছে। সরকারের মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়েছে। দেশ বিদেশে সরকার ধিকৃত ও ঘৃণিত।দেশের সকল মানুষ এবং গণতন্ত্রকামী বিশ্ব গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং আটককৃত নেতা-কর্মীসহ নিরীহ ছাত্র জনতা কে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানালেও সরকার কূটকৌশল করে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।"


তিনি বলেন, "এসব দাবীতে ছাত্র জনতার কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার আবারও নিরাপত্তা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদেরকে ছাত্র জনতার উপর লেলিয়ে দিয়ে আরো হত্যা, নির্যাতন, দমন, নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। যার ফলশ্রæতিতে সমগ্র দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল জনপদ ছাত্র জনতার বিক্ষোভ বিদ্রোহে মুখরিত। সমগ্র দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমজীবী মানুষসহ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে শামিল হয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অভাবনীয় জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্য। সমগ্র দেশ আজ  গণহত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে এক একাট্টা। গ্রাম ও শহরের ঘরে ঘরে আর্তনাদের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে খুনী সরকারের পদত্যাগের দাবি।


এমন পরিস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল এক দফা দাবি অর্থাৎ স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগের দাবি সম্বলিত : এক দফা ঘোষণাপত্র' উত্থাপন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আগে থেকেই গণতন্ত্র হত্যাকারী, ভোটাধিকারসহ জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ বিপন্নকারী, জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী লুটেরা দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সেই আন্দোলনও দমন করতে সরকার হত্যা, গুম, দমন, নিপীড়নের স্টিমরোলার  চালিয়ে ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে।"


তিনি বলেন, "বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথা আপামর জনসাধারণের উত্থাপিত এক দফা ঘোষণাপত্রের সাথে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছে। বিএনপি জাতির এই চরম ক্রান্তি লগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র প্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র জনতার সাথে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে। শত শত শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ইনশাআল্লাহ ছাত্র জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী। তীব্র গণআন্দোলনে পতন অবশ্যম্ভাবী জেনে আওয়ামী লীগ আবার সংঘাত, সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গত রাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে কারাগারে আটক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, বর্তমান এরশাদ উল্লাহর চট্টগ্রামের বাড়ীতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমন করে অবৈধ অস্ত্র ব্যাবহার করে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক ব্যরিস্টার রুমিন ফারহানার ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়, মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের পারিবারিক রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমন চালিয়ে ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা রুমিন ফারহানাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তার বাড়ীর আশে- পাশে অন্যান্য বাড়ীতেও সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আমিনুল হকের রেস্টুরেন্টে লুটপাট করে । এসময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।


শেয়ার করুন