নেপাল থেকে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি জয় করে আসা বাংলাদেশ দলকে দুই দিনের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস তার যমুনার বাসভবনে সংবর্ধনা দিয়েছেন। গতকাল সকালে চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা যমুনা ঘুরে এসে জানিয়েছেন কি কথা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে।
গতকাল দুপুরে বাফুফে ভবনে এসে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সবার পক্ষ থেকে জানিয়ে গেলেন এরকম গুণীজনদের কাছ থেকে সংবর্ধনা পেতে ভালোই লাগে। আমরা উনাকে পেয়ে অনেক কিছুই বলেছি। আশায় আছি, আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন। সাবিনা তার একটি জার্সি উপহার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে। ফুটবল উপহার দেওয়া হয়েছে।
সাবিনারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাওয়ার সময় চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, উপমহাদেশের সেরা ফুটবলার হওয়ার পুরস্কার নিয়ে গেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা, উপমহাদেশের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার নিয়ে গেছেন রূপনা চাকমা। পুরস্কার দেখে মুগ্ধ প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। নারী ফুটবলারদের চাওয়া-পাওয়া, ব্যক্তিগত সমস্যা, তাদের লক্ষ্য, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কার, লংটার্ম প্রশিক্ষণ পরিকল্পনাসহ নানা সমস্যা তুলে ধরেছেন সাফ চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা।
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা সবার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কথা শুনেছেন। পরে উপদেষ্টা জানিয়েছেন কার জন্য কী করতে হবে সেটা যেন তারা লিখিত দেয়। সাবিনা বলেন, 'আমরা আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা উনার কাছে তুলে ধরেছি, উনি আমাদের সব কিছু লিখিত দিতে বলেছেন।'
সাবিনা জানিয়েছেন স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কারো ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া আছে কি না। কোনো সমস্যা আছে কি না। সবার পক্ষ থেকে একটা জিনিস বলা হয়েছে যেটা আগেই আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম। মেয়েরা বলেছে, তাদের আবাসনের একটা ব্যবস্থা হলে ভালো হয়। কারণ মেয়েরা সারা বছর ক্যাম্পে থাকেন। তাদের পরিবার ঢাকায় এলে হোটেলে থাকতে হয়। খরচ করতে হয়। যদি মেয়েদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দেন, সেটাই মূলত বলা হয়েছে।'
প্রধান উপদেষ্টাকে কাছে পেয়ে চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা নিজ নিজ এলাকার সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা তার এলাকার সমস্যার কথা তুলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন তার এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের সমস্য রয়েছে।' ফুটবলাররা ড. ইউনূসের আন্তরিকতায় মুগ্ধ। সাবিনা বললেন, 'আমরা সবাই একটা রুমের মধ্যে ছিলাম। তখনই আমাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সবার সমস্যা নিয়ে কথা হয়। তখন উনি বলেছেন, যার যার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো লিখে দিতে। আমরা দেব। আর ফুটবল প্রশিক্ষণ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে, সেগুলো আমরা বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল স্যারের কাছে দেব।'
আর কী কী সমস্যার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে বলা হয়েছে? সাবিনা বলেন, ‘উনাকে আমরা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কথাও বলেছি। আমরা অনুশীলন করতে পারি না। অনুশীলন করতে অন্য জায়গায় যেতে হয়। এখনো স্টেডিয়ামটি রেডি হয়নি, সংস্কার চলছে।’ সাবিনা ড. ইউনূসের সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, আমরা উনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) অনুরোধ করেছি যেন বাফুফের বর্তমান কমিটিকে সরকার থেকে সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রীতি ম্যাচ খেলতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়। এটিও একটি বড় সমস্যা। সমাধানের অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টাকে। সাবিনা শুধু নিজেদের কথাই বলেননি। তিনি পুরুষ ফুটবলের কথাও তুলে ধরেছেন।
বলেছেন, ‘মেয়েদের এবং পুরুষ ফুটবলের উন্নতির জন্য যেন কাজ করা হয়, সেটা নিয়েও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।’ এত সমস্যার কথা শুনে প্রধান উপেদষ্টা কী বলেছেন? সাবিনা বলেন, ‘উনি খুবই আন্তরিকতা নিয়ে শুনেছেন এবং স্যার বলেছেন সবগুলো বিষয় দেখবেন। যেসব সমস্যা সমাধান করা যায় উনাদের সাইড থেকে উনারা চেষ্টা করবেন। আমি কথা বলেছি, কৃষ্ণা, মাসুরা, মারিয়া আমরা সবাই কথা বলেছি। আমাদের প্রথম প্রসঙ্গটাই ছিল আবাসনের ব্যবস্থা করা।’