১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৩৭:৫৫ পূর্বাহ্ন
ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২৪
ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে কবে দেশে ফিরছেন তা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। 


বিশেষ করে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার পর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে এ নিয়ে জানার আগ্রহ বেড়েছে। 


এদিকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লিডার আসছে’, এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আসলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঠিক কবে ফিরবেন, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত কোনো দিনক্ষণ পাওয়া যায়নি। 


তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে পাঁচটি মামলায় সাজা হয়, তার মধ্যে একটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। বাকি চারটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দ্রুততম সময়ে এসব মামলায় খালাস পেলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে বিএনপিতে আলোচনা রয়েছে।


তবে দলটির অভ্যন্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার তারিখ এখনো সুনির্দিষ্ট হয়নি। তার দেশে ফেরার ইস্যুটির একদিকে যেমন আইনি দিক রয়েছে, অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক বিষয় বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কখন বিদেশে যেতে পারেন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কখন দেশে ফিরতে পারেন-এ ব্যাপারে লন্ডন সফররত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে ফিরলে কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন। 


বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে বিএনপির মহাসচিবের। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ প্রশস্ত হচ্ছে জানিয়ে তার আইনজীবীরা বলছেন, সাজা হওয়া চারটি মামলাসহ ৩৯টির মতো মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।


এ বিষয়ে শনিবার লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দল যখন মনে করবে তখন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এছাড়া উনার (তারেক রহমান) আরও কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে, সেগুলো শেষ করে দেশে যাবেন।


জানতে চাইলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক যুগান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়ার লন্ডনে আসার কথা রয়েছে। ম্যাডামকে তো প্রথম রিসিভ করতে হবে। তার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই একটা আছে। ম্যাডামকে রিসিভ না করে আমার মনে হয় না কোনো কিছু হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি, উনি (তারেক রহমান) হয়তো ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) জন্য অপেক্ষা করছেন।’


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, নাশকতা, গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৮০-৮২টির মতো মামলা করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা হয়। তারেক রহমানের মামলাগুলোর মধ্যে ৬২টির মতো মানহানির মামলা বলে জানান তার আইনজীবীরা।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৮২টি মামলা করা হয়েছিল। ৫টি মামলায় তার দণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে খালাস পেয়েছেন। বাকি চারটি আদালতে বিচারাধীন আছে, এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।


তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত তারেক রহমানের মোট ৩৯টি মামলা বাতিল বা খারিজ কিংবা খালাস পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। আর বাকি ৩৮টির মধ্যে কোনো কোনো মামলা বাতিল হয়েছে, আবার কোনোটি খারিজ হয়েছে। ৩৫টির মতো মামলা আছে পেন্ডিং, এগুলো সব মানহানি মামলা।


কায়সার কামাল আরও জানান, হাইকোর্টে ৯টি মামলা আইনগতভাবে বাতিল হয়েছে এবং একটি মামলায় (একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা) তারেক রহমান বেকসুর খালাস পান। বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট আদালত (জজ এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) কর্তৃক বাতিল বা খারিজ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারেক রহমানের কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি বলে জানান তার এই আইনজীবী।


তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান দেশের প্রচলিত আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রত্যেকটি মামলা ভিত্তিহীন। তারপরও তিনি আদালতের মাধ্যমে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি চান।


সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্য যান। তখন থেকেই তিনি লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন। 


বিএনপি নেতারা জানান, তারেক রহমান দলকে যেমন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছেন, তেমনিভাবে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার দেশে ফেরা খুবই কাঙ্ক্ষিত এবং নেতাকর্মীরা সেদিকেই চেয়ে আছে।


জানা গেছে, তারেক রহমানের মামলাগুলো বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি খালাস পাচ্ছেন। বাকি মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সে ব্যাপারে আইনজীবীরা তৎপর রয়েছেন। 


বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমান দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে আছেন। এ ক্ষেত্রে তার দেশে ফেরার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী, দলের পক্ষ থেকে সেটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী দেশগুলোর মনোভাবও জানার চেষ্টা করবে বিএনপি।


বিএনপির নেতারা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তার (তারেক রহমান) দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা দেশের জনগণও গ্রহণ করেছে। তিনিই আগামীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক।




সাজা হওয়া মামলাগুলোর অবস্থা-




২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশ চলার সময় গ্রেনেড হামলা হয়। সেই হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন ৪০০-এর বেশি নেতাকর্মী। জজ আদালত এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। বহুল আলোচিত এ মামলায় ১ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আসামিদের সবাইকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।




অর্থ পাচার মামলায় সাজা স্থগিত : ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। এটি ছিল তারেক রহমানের প্রথম সাজা। মঙ্গলবার তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। একই মামলায় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ৭ বছরের সাজাও স্থগিত করা হয়েছে। তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিচারিক আদালতে তারেক রহমান খালাস পেলেও উচ্চ আদালতে তাকে সাজা দেওয়া হয়। এরূপ দৃষ্টান্ত বিচার ব্যবস্থায় বিরল। আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) দায়ের করি। আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন। ৩১ ডিসেম্বরে মধ্যে পক্ষদ্বয়কে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। পাশাপাশি হাইকোর্টের সাজাও স্থগিত করেছেন।


শেয়ার করুন