৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:২৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতায় শিক্ষার্থীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১২-২০২৪
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতায় শিক্ষার্থীরা

নবম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে এবার দশমে উঠছে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। তারা ২০২৬ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবে। সাধারণত নবম-দশম শ্রেণিতে একই পাঠ্যবই ও শিক্ষাক্রম পড়ানো হয়। ব্যতিক্রম এ শিক্ষার্থীরা। তারা নবম শ্রেণিতে বাতিল হওয়া ‘নতুন শিক্ষাক্রম’ পড়েছে। দশমে উঠে পড়বে ২০১২ সালে প্রণীত ‘সৃজনশীল শিক্ষাক্রম’। 


মাত্র এক বছর পড়ে বসতে হবে এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায়। তাছাড়া কে বিজ্ঞান বিভাগ নেবে, কে মানবিক, কে বাণিজ্য- সেটাও ঠিক করতে হবে দশম শ্রেণিতে। এ নিয়ে নানা জটিলতায় পড়েছে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।


কম সময়, ভিন্ন শিক্ষাক্রম মাথায় নিয়ে ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করবে শিক্ষার্থীরা। তার ওপর পাঠ্যবই দেরিতে হাতে পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। সব মিলিয়ে আগামী বছরের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ব্যাপক উৎকণ্ঠায়। কীভাবে পাঠ শেষ করানো হবে, তা নিয়ে গভীর চিন্তায় শিক্ষকরাও।


শিক্ষা প্রশাসন অবশ্য ‘সব সামলে’  নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কষ্টসাধ্য হলেও ২০২৬ সালে তারা যথাসময়ে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সহজ পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র’ না দেওয়া হলে বড় ফল বিপর্যয় ঘটতে পারে। যাতে ক্ষতির মুখে পড়বে ১৪-১৫ লাখ শিক্ষার্থী।


২০২৬ সালের এসএসসি ঘিরে সংকটের সৃষ্টি যেভাবে


‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা, ২০২১’  অনুযায়ী—২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। চলতি (২০২৪) শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে নতুন এ শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। তাতে একদিকে যেমন ছিল না পরীক্ষা পদ্ধতি, তেমনি ছিল না বিভাগ বিভাজনও (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য)। সবাই একই বই পড়েছে।


২০২৬ সালে এ শিক্ষার্থীদের দিয়েই নতুন ধারার সেই শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার ‘ফায়ার টেস্ট’ র পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। সেভাবে তাদের নম্বর বণ্টনের পদ্ধতিও ঠিক করা হয়। বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের বই ও শিক্ষাপদ্ধতি মেনে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেছে।


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফেরার ঘোষণা দেয়। ডিসেম্বরে পুরোনো সৃজনশীল পদ্ধতিতে বার্ষিক পরীক্ষাও নেয়। সেসময় ২০২৬ সালেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রচলিত নিয়মে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই কীভাবে এক বছর পড়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে তা নিয়ে শুরু হয় ধোঁয়াশা।


দ্বিধাদ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীরা


মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৬ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা দেবে জান্নাতুল মাওয়া তুলি। তার মা মোমেনা বেগম বলেন, ‘আমার একটাই মেয়ে। পড়ালেখায় ভালোই। কিন্তু যত সমস্যা দেখছি ওদের সময়ই হচ্ছে। নতুন কারিকুলামে নাইনে পড়লো। এখন টেনে উঠে পুরোনো কারিকুলাম। কীভাবে পরীক্ষা হবে, কেমন হবে তা নিয়ে মেয়ে সব সময় টেনশন করে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ওর ছোট খালাকে জিজ্ঞাসা করে। মেয়ের এমন ভয় পাওয়া দেখে আমরাও টেনশনে।


রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম শেরেবাংলা নগর বালিকা বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফা রিমি। সেও কোন বিভাগ নেবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে।


তার বাবা আরিফ হোসেন বলেন, যে বইগুলো দুই বছর পড়ে আগে ছেলেমেয়েরা এসএসসি পরীক্ষা দিতো, সেটা এক বছর পড়ে আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে হবে। খুব স্বাভাবিকভাবে ভয় পাচ্ছি। মেয়ের ইচ্ছা ডাক্তার হবে। এখন দশম শ্রেণিতে ওঠে বিজ্ঞান বিভাগ নেবে। সায়েন্স তো একটু কঠিন। পড়া শেষ করে পরীক্ষায় কেমন করবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।


সমাধান কী?


এবার নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা যে বই পড়েছে, দশমে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাঠ্যক্রম ও পদ্ধতি আলাদা। নবম-দশমের দুই বছরের সিলেবাস এক বছরে পড়ে কীভাবে শিক্ষার্থীরা শেষ করবে এবং এসএসসি পরীক্ষা দেবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।


শিক্ষা বোর্ড বলছে, শিক্ষার্থীদের সিলেবাস ঠিক করে দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এবার তারা সংক্ষিপ্ত একটি সিলেবাস প্রণয়ন করে বইয়ের সঙ্গেই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে দেবে। সেই সিলেবাস থেকে প্রশ্ন তৈরি করবে শিক্ষা বোর্ড।


দেশের সবকটি শিক্ষা বোর্ডের মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। ৩০ ডিসেম্বর তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাবেন। বিষয়টি নিয়ে তিনিও কাজ করেন।


তিনি বলেন, শুধু এক বছরে কতটুকু একজন শিক্ষার্থী পড়তে পারবে, তা গবেষণা করে এনসিটিবির কর্মকর্তারা একটি সিলেবাস প্রস্তুত করবেন। সিলেবাসটি এমন হবে, যাতে নবম-দশমের বইয়ের মৌলিক শিক্ষাটা তাতে থাকে। পরবর্তী শ্রেণিতে গিয়ে যাতে শিক্ষার্থীদের বড় অসুবিধায় পড়তে না হয়। এ দায়িত্ব এনসিটিবির।


এবিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সিলেবাস করেছি। এটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বলার সুযোগ নেই। প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠার সিলেবাসটি প্রস্তুত করে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেওয়ার পর শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সেটা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সেটা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।


দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখন তাহলে করণীয় কী? এমন প্রশ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক এ পরিচালক বলেন, আমি মনে করি, পড়াতে হবে সব। পড়তে দিতে হবে সব। যার যতটুকু সাধ্য সে পড়বে। যদি কেউ এ সময়ে কঠোর পড়াশোনা করে পুরো বইটা শেষ করতে পারে, তাহলে আপনি ঠেকাবেন কেন? যদি তাদের ছাড় দিতেই হয়, সেটা দিতে হবে প্রশ্নপত্রে। সেখানে সহজ প্রশ্ন করুন। তুলনামূলক কম প্রশ্ন দিয়ে নম্বর বাড়িয়ে দেন। কিন্তু পুরো বইটা শিক্ষার্থীকে পড়তে ও জানতে দিতে হবে।


 নম্বর বণ্টন-প্রশ্নের ধরন যেমন হবে


এনসিটিবির প্রকাশিত সিলেবাসে নম্বর বণ্টনে দেখা যায়, ব্যবহারিক না থাকা বিষয়গুলোতে ৭০ নম্বরের রচনামূলক ও ৩০ নম্বর বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্র। ব্যবহারিকসহ বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৭৫ ও ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। তত্ত্বীয় অংশে ৪০ নম্বর ও বহুনির্বাচননী অংশে ২৫ নম্বর থাকবে।


শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) এনসিটিবির ওয়েবসাইটে নবম-দশম শ্রেণির বিভাগ বিভাজনসহ এ সিলেবাস ও নম্বর বণ্টন প্রকাশ করা হয়। ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের মোট ৩২টি বিষয়ের সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন