অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৭ ডিসেম্বর ‘জাতীয় সংলাপ-২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত। তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।’ তার এ বক্তব্যের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
ভোটারদের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে বিএনপি মূলত সময় ক্ষেপণের দিক নিয়েই বেশি চিন্তিত। দলটি মনে করছে, ১৭ বছর করা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে আরও অনেক সংস্কার যুক্ত। সেটা হলে তারা যে দ্রুত নির্বাচন চায় সেটা বিলম্বিত হবে।
সেইসঙ্গে ভোটের হিসাবও করছে তারা। কারণ এখনকার যে ভোটের হিসাব, তাতে নির্বাচনে বিএনপির কোনো সংকট বা আশাহত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু ১৭ বছর হলে যে এক কোটি নতুন ভোটার হবে তারা কোন দিকে যাবে সে ব্যাপারটিও তাদের জন্য ভাবনার।
প্রধান উপদেষ্টার কথার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন তাহলে কী করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি, এ বিষয়কে এভাবে না বলে, এ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তার পরে এ বিষয় আনতে পারলে ভালো হতো, কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। এখন তো আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা সরকারের প্রধান নির্বাহী, তিনি বলে দিচ্ছেন- ১৭ বছর হলে ভালো। যদি এক বছর কমাতে চান, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক। প্রধান উপদেষ্টা যখন বলে দেন, তখন চাপ তৈরি হয় নির্বাচন কমিশনের জন্য।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এখন ১৭ করা হলে আরেক গ্রুপ বলবে ১৬ বছর কেন নয়? তখন নানা দিক থেকে নানা দাবি উঠবে। নানা ধরনের আন্দোলন শুরু হবে, যা একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করবে। অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে। আর তাতে সামনের নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে৷ আমরা সেটা চাই না।’
তিনি আরও বলেন, আর ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের তো বাংলাদেশে শিশু মনে করা হয়। আমরা শিশুদের ভোটাধিকার দেব কী না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যদি ১৭ বছর করার প্রয়োজন হয় তাহলে নির্বাচিত সরকার সেটা সংসদে আলোচনা করে দেখতে পারে। সংবিধান এবং আইনের সংস্কারের যদি প্রয়োজন হয় সেটা নির্বাচিত সরকার দেখবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, নির্বাচনসহ নানা ধরনের সংস্কারের জন্য কতগুলো কমিশন কাজ করছে। তারা এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেনি। বসবে কী না জানি না। কিন্তু ওই কমিশনের প্রস্তাবের আগেই যদি প্রধান উপদেষ্টা ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছরের কথা বলেন তাহলে এটা কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হয়ে এই চাপ দেওয়া ঠিক হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
এই নেতা আরও বলেন, আসলে ভোটারের বয়স ১৭ করতে হলে আরও অনেক পরিবর্তন লাগবে। এটা সময় সাপেক্ষ। এখন অনেক নন -ইস্যুকে ইস্যু করে এই সরকারের যে মূল কাজ তা থেকে তারা দূরে সরছে। আমাদের দরকার নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ। সংবিধানকে সামনে রেখে সেই দিকে তাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ভোটারের বয়স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে ১৭ বছরের কথা বলেছেন সেটা নিয়ে আমরা দলীয়ভাবে আলোচনা করিনি। ফলে দলের পক্ষ থেকে কোনো মতামত এখনো দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। আগের সময়ের চেয়ে ম্যাচিউরিটি এবং সচেতনতা কম বয়সেই আসে। ফলে ১৭ বছর বয়সে ভোটার করা যেতে পারে।
আগামী ৩ জানুয়ারি প্রধার উপদেষ্টার কাছে ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ প্রতিবেদন জমা দেবে। ওই কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, আমরা ভোটারদের বয়স নিয়ে কোনো সুপারিশ করছি না। এটা আমাদের কাজও নয়। সংবিধানেই ভোটারদের বয়স এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স নির্ধারণ করা আছে। এব্যাপারে কোনো সুপারিশ থাকলে সংবিধান সংস্কার কমিশনের থাকতে পারে।
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে