যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম দিন অফিসে বসেই শক্তি, সীমান্ত এবং অভিবাসন প্রয়োগ নিয়ে একাধিক নির্বাহী আদেশ জারির পরিকল্পনা করছেন বলে চারটি ভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
স্টিফেন মিলার আসন্ন হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ ফর পলিসি স্থানীয় সময় রোববার (১৯ জানুয়ারি) রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল নেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন বলে তিনটি সূত্র জানিয়েছে। ট্রাম্প সোমবার ডজনখানেক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন বলে চতুর্থ সূত্র জানিয়েছে। এসব আদেশে ফেডারেল কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে আসন্ন পদক্ষেপগুলোর পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। তবে এই উদ্যোগগুলো প্রথম দিনের নির্বাহী আদেশের জন্য ঐতিহাসিকভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রথম সপ্তাহে মোট ২২টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন, যা তখনকার সময়ে একটি আধুনিক রেকর্ড।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় (গ্রিনেচ মান সময় ১৭.০০ বা বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টা) শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ক্যাপিটাল হিলের পশ্চিম লনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হলেও এবার সেটি হবে ক্যাপিটাল রোটুন্ডায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার শপথের দিন দুপুরে তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকতে পারে। তবে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড ও সঙ্গীতানুষ্ঠান হবে ইনডোর ভ্যানু ক্যাপিটল ওয়ান এরিনায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে নতুন করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
ট্রাম্প বলেন, খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে আমি প্রার্থনা, অন্যদের বক্তৃতা এবং আমার শপথ ও অভিষেক ভাষণটি ইউএস ক্যাপিটাল হিলের হলরুমে আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছি, যেমনটি ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগান করেছিলেন।
ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড আয়োজন করতে সোমবার ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনা (ইনডোর ভ্যানু) খুলে দেওয়া হবে। আমার শপথগ্রহণের পর আমি ক্যাপিটাল ওয়ানে সবার সঙ্গে যোগ দেব।
সাধারণত মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় নেওয়া শপথে তিনি বলবেন, আমি দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, বিশ্বস্ততার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব।
২০১৭ সালে প্রথম অভিষেকের সময় ট্রাম্প ১৮৬১ সালে আব্রাহাম লিংকনের শপথ নেওয়া বাইবেলে ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তার প্রয়াত মা মেরি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্পের উপহার দেওয়া দ্বিতীয় আরেকটি বাইবেলও ছিল। মিডিয়া রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবারও ট্রাম্প সেই দুটি বাইবেল ছুঁয়েই শপথ নেবেন। ট্রাম্পের শপথ উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ সংস্করণের বাইবেল এখন ৬৯.৯৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। শপথ শেষে নতুন প্রেসিডেন্ট আগামী চার বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। একই দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন।
ট্রাম্প, তার স্ত্রী মেলানিয়া এবং ট্রাম্প পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ইউএস এয়ার ফোর্সের একটি উড়োজাহাজ স্থানীয় সময় শনিবার ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে ট্রাম্প পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওয়াশিংটন উপকণ্ঠে অবস্থিত ভার্জিনিয়ায় তার গলফ ক্লাবে যান। গলফ ক্লাবে আতশবাজি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ট্রাম্পের শপথগ্রহণ উৎসব। ট্রাম্প শনিবার ওয়াশিংটন রওয়ানা হওয়ার আগে টেলিফোনে এনবিসি নিউজকে বলেন, সোমবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই তিনি রেকর্ডসংখ্যক নির্বাহী আদেশে সই করবেন। যদিও ঠিক কতগুলো আদেশে সই করবেন, তা এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে সেটি রেকর্ডসংখ্যক হবে। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সংখ্যাটি ১০০ পার করবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, সংখ্যাটি অন্তত এমনই হবে।
২০০ মিলিয়ন ডলারের অভিষেক অনুষ্ঠান: অ্যাপলের টিম কুক এর আগে ক্যাপিটাল হিলে ৬ জানুয়ারির তাণ্ডবকে লজ্জাজনক দিন বলে উল্লেখ করলেও তিনি ট্রাম্পের অভিযোগের জন্য ১ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কেবল কুক একা নন। আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের অনুগ্রহ পেতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রেকর্ড ১৭০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে। উৎসবের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থের পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকে আভাস দিয়েছেন। এই তহবিল অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যয়, সেই সঙ্গে প্রাইভেট বলপার্টি এবং কুচকাওয়াজের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ব্যয় করা হবে।
গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং মেটা বলেছে যে, তারা ১ মিলিয়ন ডলার করে তহবিল সরবরাহ করবে। সেই সঙ্গে ওপেন আইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানও ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। অন্যান্য বড় অর্থদাতার মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার, আর্থিক পরিষেবা কোম্পানি ইনটুইট, স্টক-ট্রেডিং অ্যাপ রবিনহুড এবং ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো অটোমোবাইল কোম্পানি। ট্রাম্পের আগের অভিষেকেও রেকর্ড পরিমাণ ১০৬.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ হয়েছিল। অন্যদিকে বাইডেন ২০২১ সালের অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান হিসাবে মাত্র ৬১.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন ।
সীমান্ত এবং অভিবাসন সম্পর্কিত পদক্ষেপ
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং মাদক পাচারকারী চক্রগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেবেন ট্রাম্প। এছাড়া 'মেক্সিকোতে থাকা' নীতি পুনর্বহাল করার পরিকল্পনাও করেছেন তিনি।
শক্তি উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার উদ্যোগ
ট্রাম্প শক্তি উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার জন্য বড় পদক্ষেপ নেবেন। যেমন বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর থাকা নিয়মগুলো বাতিল করা। এছাড়া, শক্তি সম্পর্কিত একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরিকল্পনাও রয়েছে, দুটি সূত্র জানিয়েছে।
ফেডারেল কর্মী সংক্রান্ত সংস্কার
তিনটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প বাইডেন-যুগের বৈচিত্র্য, সাম্য এবং অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) উদ্যোগগুলো শেষ করার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া, তিনি ‘স্কেজুল এফ’ শ্রেণিবিভাগ পুনর্বহাল করবেন। যা ফেডারেল কর্মচারীদের নিয়োগ এবং বরখাস্তের বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে আরও ক্ষমতা দেবে।
ট্রাম্প রবিবার ওয়াশিংটনে একটি সমাবেশে সমর্থকদের বলেন ‘কাল একজন বলল, ‘স্যার একদিনে এতগুলো সই করবেন না। কয়েক সপ্তাহ ধরে করুন।’ আমি বললাম, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে নয়, প্রথম দিনেই আমরা এগুলো সই করব।
বিশেষ অনুষ্ঠান ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা জেসন মিলার রবিবার স্কাই নিউজে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শপথ নেওয়ার পরপরই ক্যাপিটাল রোটুন্ডার ভেতরে কিছু নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন ট্রাম্প। এরপর ক্যাপিটাল ওয়ান এরেনায়, যেখানে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে সেখানে বসে অতিরিক্ত কিছু আদেশে সই করবেন।